বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তখন মানবাধিকার কোথায় ছিল: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ১৩:৩৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার অধিকার, আমার মানবাধিকার, আমার বাবা-মা হত্যার বিচার পাওয়া, ভাইয়ের হত্যার বিচার পাওয়া, এই অধিকার তো আমার ছিল। সেখান থেকে আমরা বঞ্চিত ছিলাম, রেহানা ছিল, আমরা তো বঞ্চিত ছিলাম। কিন্তু আমাদের সেটা সমাধান করতে হলো। বাংলাদেশে কি বিবেকবান কোনো মানুষ ছিল না?’

মানবাধিকারহীন পরিস্থিতির সবচেয়ে বড় শিকার হিসেবে নিজেকে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের দল বিএনপির কাছ থেকে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানবাধিকারের ধারণা শেখার কিছু নেই।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আরোহন, তার আমলের জাতীয় নির্বাচন ও নানা ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন শেখ রাসেল স্মরণের এক আলোচনায়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে জাতির পিতাকে হত্যার রাতে খুন করা হয় তার ১১ বছরের শিশু শেখ রাসেলকেও। তার জন্মদিন ১৮ অক্টোবর এবার প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে শেখ রাসেল দিবস হিসেবে।

এই দিবস পালনে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘শেখ রাসেল পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

১৫ আগস্টের কালরাতের প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, আজকে তো অনেক মানবাধিকারের কথা বলা হয়। একটা কেউ মারা গেলে বিচার চাওয়া হয়। আমরা কী অপরাধ করেছিলাম? ১৫ আগস্ট আমরা যারা অপনজন হারিয়েছি...আমাদের অপরাধটা কোথায় ছিল?’

জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আরোহনের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, একজন সেনাপ্রধান হিসেবে সে (জিয়াউর রহমান) দায়িত্ব নিল। কখন? যখন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হলো এবং অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়া হলো। তাদের মুখে আমাদের গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়, ভোটের কথা শুনতে হয়, মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়!

‘অথচ এদের হাতেই তো বারবার, আমার ওপরেও কতবার আঘাত এসেছে! জানি না বেঁচে গেছি, আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছে বোধ হয় এদিনটি দেখার জন্য… যে নামগুলো মুছে ফেলা হয়েছিল ইতিহাস থেকে; আমার বাবার নাম, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল, যেখানে তার নামটাও নেয়া যেত না এমন একটা পরিবেশ ছিল।

‘সত্যকে মুছে ফেলার যে অপচেষ্টা, বিচারহীনতার যে কালচার তৈরি হয়েছিল, আজকে জাতি সেখান থেকে মুক্তি পেয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে এসব লোক যারা হত্যাকারীর মদতকারী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী…

‘আমার অধিকার, আমার মানবাধিকার, আমার বাবা-মা হত্যার বিচার পাওয়া, ভাইয়ের হত্যার বিচার পাওয়া, এই অধিকার তো আমার ছিল। সেখান থেকে আমরা বঞ্চিত ছিলাম, রেহানা ছিল, আমরা তো বঞ্চিত ছিলাম। কিন্তু আমাদের সেটা সমাধান করতে হলো। বাংলাদেশে কি বিবেকবান কোনো মানুষ ছিল না?’

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ করতে যেসব বিচারক ‘বিব্রতবোধ’ করেছিলেন তাদের অনেকেই এখন ‘খুব বড় বড় দার্শনিক’ হয়ে গেছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি কিছু বলি না। কারণ, আমার একটাই লক্ষ্য। এই দেশটা আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, নিরাপদ জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়।

‘আর বাংলাদেশ যে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি, সেই বাংলাদেশ যেন বিশ্বসভায় একটা মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে। এটাই ছিল আমার লক্ষ্য। সে লক্ষ্য অর্জন করার জন্য স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আমাকে চলতে হয়েছে।’

বাংলাদেশে এ রকম অন্যায় আর ঘটুক সেটা চান না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, আজকে আন্তর্জাতিকভাবে কত কিছু, মানবাধিকারের কথা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ, কত কিছুই হয়। কই? তখন তো কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি।’

আওয়ামী লীগ ও বাংলার জনগণ পাশে ছিল উল্লেখ করে জাতির পিতার বড় মেয়ে বলেন, ‘যারা এই ঘাতকদের সঙ্গে ছিল, যারা এই ঘাতকদের সহযোগিতা করেছিল, চক্রান্তের সঙ্গে ছিল এবং হত্যার পর যারা এই ঘাতকদের পুরস্কৃত করেছে, শুধু পুরস্কৃত না, তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া, প্রমোশন দেয়া, এমনকি যে ঘাতক মরে গেছে তাকেও প্রমোশন দিয়ে পুরস্কৃত করা, এই অন্যায়-অবিচার তো আমি এসে নিজের চোখে দেখেছি।

‘তাহলে আজকে আমরা মানবতার কথা, মানবাধিকারের কথা, এত কথা গালভরা শুনি কেন? আমার এই প্রশ্নের জবাব কি কেউ দিতে পারবে?’

‘কোনো শিশু রিফিউজি হোক চাই না’

নিজের শরণার্থী ও যুদ্ধবন্দি জীবনের কথা স্মরণ করে, যুদ্ধ, ধ্বংস ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার বদলে একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কবি সুকান্তের ভাষায় তিনি বলেন, ‘এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এই আমার অঙ্গীকার। এটাই করতে চাই। আমার বাংলাদেশ যেন স্বাধীনতার চেতনায় এগিয়ে যায়, একটা শান্তিপূর্ণ বিশ্ব আমরা চাই। যুদ্ধ চাই না, ধ্বংস চাই না, অস্ত্র প্রতিযোগিতা চাই না, শান্তি চাই আমরা, শান্তি চাই। কোনো শিশু রিফিউজি হোক চাই না, কোনো শিশু বুলেটের আঘাতে তার জীবনপ্রদীপ নিভে যাক, বা তোর ছোট্ট দেহ ক্ষতবিক্ষত হোক, সেটা আর চাই না। বিশ্বে শান্তি ফিরে আসুক। আর আমার দেশের মানুষ তারা ভালো থাকুক।’

শেখ হসিনা বলেন, ‘আজকে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, কত শিশু আজকে এতিম হয়ে যাচ্ছে, কত শিশু আজকে কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের দেশে রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। সেখানেও যারা যারা শিশুরা তারাও রিফিউজি হিসেবে মানুষ হচ্ছে।’

'৭৫ সালে শেখ রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে না যাওয়ার আক্ষেপ

১৯৭৫ সালে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে গেছেন দেশের বাইরে থাকায়। তিনি জানান, সে সময় তারা রাসেলকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার বাবা-মা দেননি।

সেই আক্ষেপের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘তখন সে অসুস্থ ছিল। তা ছাড়া কেন যেন মা, আব্বা রাজি ছিলেন না। সবাই চলে গেলে বাসা খালি হয়ে যাবে। এখন মনে হয়, তাকে যদি সঙ্গে করে নিয়ে যেতাম, তাহলে রাসেলকে এইভাবে ঘাতকের হাতে জীবনটা দিতে হতো না।’

‘আজকে তার বয়স হতো ৫৯ বছর। হয়তো সে জীবনে অনেক বড় হতে পারত। তার জীবনের একটা স্বপ্ন ছিল। ছোটবেলা থেকে বলত সেনা অফিসার হবে। বেঁচে থাকলে হয়তো আমরা দেখতাম, কিন্তু তাকে বাঁচতে দেয়া হয়নি।’

ছোট ভাই শেখ রাসেলকে নিয়ে বলতে গিয়ে বড় বোন শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা ছোট্ট শিশু, একটা ফুল না ফুটতেই ঝরে গেল। ঝরে গেল চরম নির্মমতার মধ্য দিয়ে, ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে।’

শৈশবের দুরন্তপনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ায় গেলে ছোট ছোট বাচ্চাদের সে সংগ্রহ করত। তাদের সে প্যারেড করাত। প্যারেডের পর প্রত্যেককে খাবার দিতে হবে, প্রত্যেককে নতুন কাপড়চোপড় দিতে হবে। প্যারেড শেষে সবাইকে আবার পুরস্কার দিত এক টাকা করে। তার এই শিশুবাহিনীর জন্য আমার মা সব সময় কাপড়চোপড় কিনে নিয়ে যেতেন। আমার চাচা তখন ব্যাংক থেকে নতুন এক টাকার নোট হাতে রাখতেন।’

'৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পর জাতির পিতাকে গ্রেপ্তারের পর পরিবারের সবাইকে ধানমন্ডির ১৮ নম্বরের একতলা একটি বাড়িতে বন্দি করার পরের ঘটনাপ্রবাহও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘সেখানে কোনো আসবাবপত্র ছিল না। পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে আমাদের একটি কম্বল দেয়া হয়েছিল বসার জন্য। ধুলোবালিভরা সেই বাড়িতে সেখানে আমাদের স্থান হয়। ছোট্ট রাসেল, ওই বন্দিখানায় তার খেলাধুলার কিছু নেই, পড়াশোনার কিছু নেই, এমনকি ওই এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছিল।

‘ওই অবস্থায় তার ভেতরে যে অব্যক্ত বেদনাটা, মুখ ফুটে কিন্তু বলত না, চোখে পানি। যদি জিজ্ঞেস করতাম, কী হলো চোখে পানি কেন? বলত, না, চোখে কী যেন পড়েছে। কেমন যেন ওই বাচ্চাটাও তার কষ্টটা লুকানোর একটা চেষ্টা করত।’

১০ জনকে শেখ রাসেল পদক

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ প্রবর্তিত ‘শেখ রাসেল পদক ২০২২’ দেয়া হয় অনুষ্ঠান থেকে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিজয়ীদের হাতে পদক তুলে দেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ক্রীড়া, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু-কিশোর, শিল্পকলা ও সংস্কৃতি, খুদে প্রোগ্রামার, খুদে উদ্ভাবক, খুদে লেখক, শিক্ষা, ডিজিটাল স্কুল, এবং ডিজিটাল এক্সিলেন্স ১০ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে পদক দেয়া হয়।

এ বিভাগের আরো খবর