বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেট্রোরেলের দুই স্টেশনে যাত্রী উঠবে কীভাবে

  •    
  • ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ১১:৩৩

মিরপুরের শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়ায় মেট্রোরেলের স্টেশনে ওঠার সিঁড়ি ও লিফট নির্মাণ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। সংকীর্ণ ফুটপাতের ওপর দোকান ও ভবন ঘেঁষে বানানো হচ্ছে সিঁড়ি। জমি অধিগ্রহণ করে ফুটপাত প্রশস্ত করার পরিকল্পনা থাকলেও উদ্বোধনের আগে তা হচ্ছে না।

ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চালু করা উপলক্ষে স্টেশনগুলোর কাজ চলছে পূর্ণোদ্যমে। তবে এ প্রস্তুতিতে পিছিয়ে আছে মিরপুরের শেওড়াপাড়া আর কাজীপাড়া স্টেশন দুটি।

এ দুই স্টেশনে মূল বিপত্তি দেখা দিয়েছে স্টেশনে ওঠার সিঁড়ি নির্মাণের জায়গা নিয়ে। সংকীর্ণ ফুটপাতের জায়গায় সিঁড়ি, চলন্ত সিঁড়ি ও লিফট নির্মাণের কাজ শেষ মুহূর্তে শুরু হলেও এগুলোতে হাজার হাজার যাত্রী কীভাবে ওঠানামা করবেন, তা নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যস্ত সময়ে অনেক যাত্রী ওঠানামার জন্যে এখানে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। সিঁড়ি বানানো হয়েছে সংকীর্ণ ফুটপাতজুড়ে।

সিঁড়ির আশপাশে জমি অধিগ্রহণের কাজ এখনও শেষ হয়নি। ফলে সংকীর্ণ জায়গায়ই সিঁড়ি রেখে স্টেশন উদ্বোধন করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছে, এই দুই স্টেশনের ফুটপাতের জায়গা না রেখে যেভাবে মেট্রোরেলের সিঁড়ি ও লিফট নির্মাণ করা হচ্ছে, তাতে উদ্বোধনের সময় থেকেই মেট্রোরেলে যাতায়াতকারী ও ফুটপাত দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেক বেড়ে যাবে।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, আপাতত এই দুটি স্টেশনের ওঠানামার জায়গা ফুটপাত ঘেঁষে করা হলেও পরে জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে প্রশস্ত চলাচলের পথ করা হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে উদ্বোধনের লক্ষ্য থাকায় কাজে পিছিয়ে থাকা কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া স্টেশন নির্মাণ শ্রমিকদের যেন দম ফেলার সময় নেই। বেশ কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করছেন তারা। কেউ করছে ড্রেন নির্মাণের কাজ, কেউ করছে স্টেশনের সিঁড়ি আর লিফটের কাজ। আর কেউ করছে ফুটপাতের ব্যারিয়ার তৈরির কাজ। সব মিলিয়ে নির্মাণকাজের মহাযজ্ঞ চলছে এখানে।

সব কিছু ছাপিয়ে চোখে পড়ে স্টেশন এলাকায় পথচারীদের চলাচলের ফুটপাতের করুণ দশা। বিশেষ করে স্টেশনের সিঁড়ি, চলন্ত সিঁড়ি ও লিফট নির্মাণের স্থানের ফুটপাত উধাও হয়ে গেছে। সেখানে পথচারীদের চলাচলের কোনো জায়গা রাখা হয়নি। বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষ প্রধান সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করছে। আর কিছু কিছু জায়গায় ফুটপাত এমন সরু পথে পরিণত হয়েছে, যেখানে একজন মানুষ কোনো মতে চলাচল করতে পারে।

এই সংকীর্ণ সিঁড়ি দিয়েই উঠতে হবে মেট্রোরেলে। ছবি: নিউজবাংলা

ডিসেম্বরে মেট্রোরেল উদ্বোধন হলে মানুষ কীভাবে এই সংকীর্ণ ফুটপাত দিয়ে সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছাবে, তা নিয়ে শংকিত স্থানীয়রা। কাজীপাড়া এলাকায় জসিম আহম্মেদ নামে এক বাসিন্দা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এত টাকা খরচ করে সরকার মেট্রোরেল করছে সাধারণ মানুষের জন্য, অথচ তারাই স্টেশনের নিচে ফুটপাত দিয়ে ভালোভাবে চলাচল করতে পারবে না– এটা তো কোনো কথা হতে পারে না। এই সমস্যা তো আজকে তৈরি হয়েছে, তা নয়। স্টেশন তৈরি করার সময় নিশ্চয়ই সমীক্ষা করা হয়েছে। তখন কেন তারা এই সমস্যা চিহ্নিত করতে পারেনি। আর এখন এই সমস্যা চিহ্নিত হওয়ার পর কি কাজে গাফিলতির দায়ে সেই সমীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে? সব কিছুর পর আসলে দিনশেষে ভুক্তভোগী হই আমাদের মতো সাধারণ মানুষ।’

জসিম উদ্দিনের মতো ক্ষুব্ধ এলাকার ব্যবসায়ীরাও। কাজীপাড়া স্টেশনের নিচে মর্ডান ফার্নিচার গ্যালারির কর্মচারী মোহাম্মাদ ইব্রাহিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের কাজের জন্য কয়েক বছর ধরে আমাদের ব্যবসা লাটে উঠেছে। ভেবেছিলাম কাজ শেষ হলে ব্যবসা বাড়বে। কিন্তু এই সরু ফুটপাতের জন্য তা আর হবে না। কারণ ফার্নিচারের দোকানের সামনে একটু জায়গা না থাকলে হয় না। ফার্নিচার আনা-নেওয়ার জন্যও আমাদের দোকানের সামনে ভ্যান বা পিকআপ রাখতে হয়। এখন ফুটপাত সরু হওয়ায় মানুষ রাস্তা দিয়ে হাঁটাচলা করবে। তাহলে আমরা ভ্যান রাখব কোথায়? সামনে আমাদের মালিক এই ব্যবসাই বন্ধ করে দেবে বলে মনে হয়। ব্যবসা খারাপ হওয়ায় বেশ কয়েক মাস আমাদের বেতনই ঠিকমতো হয় না।’

ভূমি অধিগ্রহণও শেষ হয়নি

কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া স্টেশন এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ করে ফুটপাত প্রশস্ত করা হবে বলে বেশ কিছুদিন আগে গণমাধ্যমগুলোকে জানিয়েছিল ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। তবে স্থানীয় জমির মালিকরা নিউজবাংলাকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত তারা ঢাকা জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন মাত্র। এ ছাড়া আর কিছুই জানানো হয়নি।

পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় মেট্রোরেলের স্টেশনের নির্মাণাধীন লিফটের ধার ঘেঁষে একটি ছয়তলা বাড়ি। এটির মালিক সপু আহম্মেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই লিফট তৈরির কারণে আমার ভবনের সামনে এখন আর এক হাত জায়গাও নেই। মানুষ চলাচল তো দূরের কথা, এখন আমার ভবনের নিচতলার দোকানগুলোতেও কাস্টমাররা ঠিকমতো আসতে পারে না। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলেছিল, আমার কিছুটা জমি নাকি তারা অধিগ্রহণ করবে। কিন্তু তাদের তৎপরতা তো দেখছি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণের অগ্রগতি বলতে আমি ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি চিঠি পেয়েছি মাত্র। সেখানে তারা বলেছে, আমার কাছ থেকে দেড় শতকের মতো জমি নেবে। এরপর তাদের আর কোনো খোঁজ নেই। শুধু আমি একাই না, এই স্টেশনের নিচে যাদের জমি আছে তারা কেউই জানে না তাদের জমি কবে অধিগ্রহণ করা হবে। অথচ শুনলাম এই ডিসেম্বরে নাকি মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হবে। কথা হলো আমাদের জমি অধিগ্রহণ না করলে সরকার তো ফুটপাত তৈরি করতে পারবে না। এরা কীভাবে কী কাজ করছে, আমি বুঝতেছি না।’

সপু আহম্মেদ আরও বলেন, ‘আমার এখানে ৬-৭ শতকের মতো জায়গায় এই ভবন তৈরি। এখানে সরকার মাত্র দেড় শতকের মতো জায়গা নিলে আমার ভবন একটা বেখাপ্পা ভবনে পরিণত হবে। তখন এই ভবন দিয়ে আমি কী করব বুঝতেছি না। তারপরও সরকার চাইলে আমি জমি দিতে বাধ্য। কিন্তু তাদেরই তো গরজ থাকতে হবে।’

এ বিষয়ে এমআরটি লাইন-৬-এর ডিপিএম মাহফুজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টা আসলে আমাদের না। এটা ডিসি অফিসের কাজ। আমাদের যতটুক কাজ, আমরা সেটা শেষ করে ডিসি অফিসে পাঠিয়েছি। এখন ডিসি অফিস এ বিষয়ে তাদের কার্যক্রম চালাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণে কিছুটা সময় লাগলেও এই দুই স্টেশনের সিঁড়ি ও লিফটের কাজ ইতোমধ্যে আমরা শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি, যথাসময়েই নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাবে এবং ডিসেম্বরেই উদ্বোধন করা হবে।’

মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আপাতত উদ্বোধনের সময় হয়তো এই দুটি স্টেশনে ওঠানামার সিঁড়ি ফুটপাত ঘেঁষে করা হলেও পরে জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে প্রশস্ত চলাচলের পথ করা হবে। এখন ফুটপাতের জায়গায় ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে বলে মানুষের মনে হতে পারে এখানে ফুটপাত একেবারেই নেই। কিন্তু এই ড্রেন নির্মাণ হয়ে গেলে কিছুটা হলেও ফুটপাত দৃশ্যমান হবে। তখন মানুষ মোটামুটিভাবে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে পারবে। আর ভূমি অধিগ্রহণ শেষে ফুটপাত আরও প্রশস্ত করে দিলে আর কোনো সমস্যাই থাকবে না।’

সেপ্টেম্বর মাস শেষে মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৯৫ শতাংশ। এ রুটের ৯টি স্টেশন হচ্ছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও।

এ বিভাগের আরো খবর