ঐক্যবদ্ধ হয়ে নবোদ্যমে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে আলোচিত-সমালোচিত সংগঠন আওয়ামী ওলামা লীগ। এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে সংগঠনটির বিভিন্ন গ্রুপের নেতাদের।
বৈঠকে তাদের জানানো হয়, আলেম-ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ করে একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন করা হবে। পাশাপাশি সংগঠনটির সব গ্রুপের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ওলামা লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসান শরীয়তপুরী বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আব্দুস সোবহান গোলাপ আমাদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে আলেম-ওলামাদের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দিতে বলেছেন যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ওলামা লীগের একটি কমিটি করা হবে। তার আগে এ সংগঠনের একটি গঠনতন্ত্র তৈরি করা হবে।’
আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকার সময় ওলামা লীগ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিভিন্ন বিতর্কিত বক্তব্য এবং ধর্মীয় ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক অবস্থান নেয় ওলামা লীগ। এ কারণে ক্ষমতাসীন দলটি ওলামা লীগের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করে। একপর্যায়ে বিপিএল নিষিদ্ধ এবং বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন বাতিলের দাবি তোলার পর ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি আওয়ামী ওলামা লীগের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারকে আহ্বান জানায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী ওলামা লীগের নাম ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
অবশ্য এর আগে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে এক দফা সমালোচিত হয় ওলামা লীগ। ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় বোখারী-হাসান ও হেলালী-দেলোয়ার গ্রুপ।
২০১৭ সালের ২২ মে আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে তৎকালীন ধর্মবিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানিয়েছিলেন, ওলামা লীগের বিভিন্ন অংশের বিতর্কিত বক্তব্য ও সমালোচিত কর্মকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সংগঠনটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন।
ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একটি আলাদা ইসলামিক ফোরাম গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আইনজীবীদের একটি পৃথক ফোরাম করেছি আমরা। আমার মনে হয় ইসলামী একটি ফোরামও প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সামনে রমজান মাস, তখন ইসলামিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ওই ফোরামের মাধ্যমে করা যাবে।’
ওলামা লীগকে সম্মানের চোখে দেখা হলেও মূলত গ্রুপিংয়ের কারণেই সংগঠনটি অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। ২০১৯ সালে কার্যক্রম স্তিমিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ওলামা লীগের তিনটি গ্রুপ সক্রিয় ছিল। এর এক অংশের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাওলানা মুহাম্মদ আখতার হোসাইন বুখারী ও মাওলানা মো. আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী।
অন্য একটি অংশের সভাপতি ছিলেন প্রয়াত মাওলানা ইলিয়াস হোসাইন হেলালী ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দেলোয়ার হোসেন। মাওলানা আহাদ আলী সরকার নিজেকে সভাপতি দাবি করে আরেকটি অংশের নেতৃত্ব দিতেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১২ অক্টোবর ওলামা লীগের সব গ্রুপের সঙ্গে বৈঠক করেন গোলাপ। মাওলানা মুহাম্মদ আখতার হোসাইন বুখারী ও মাওলানা মো. আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, মাওলানা আহাদ আলী সরকারসহ দুই শতাধিক আলেম-ওলামা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আলেম-ওলামাদের নিয়ে বসেছিলাম। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’
প্রসঙ্গত, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালে আওয়ামী ওলামা পার্টি গঠন করেন। তখন নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর সংগঠনটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে ওলামা পার্টি নতুন করে আওয়ামী ওলামা লীগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সে সময় সংগঠনটির নেতৃত্ব দেন মাওলানা হাবিবুল্লাহ কাচপুরী। পরবর্তী সময়ে সংগঠনটি বিভক্ত হয়ে পড়ে।