দলীয় মিটিং-মিছিলে না যাওয়ায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শাহপরান হল থেকে এক ছাত্রকে বের করে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে ছাত্রলীগের একাংশ।
এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এর জের ধরে রোববার রাতে ক্যাম্পাসে অস্ত্র হাতে নামেন বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী।
শাহপরান হলের ছাত্ররা জানান, ডি ব্লকের ৩৩৯ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী শামশেদ সিদ্দিকী সুমন। পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের এই ছাত্র আগে শাবি ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিনের গ্রুপে সক্রিয় ছিলেন।
রুহুল ক্যাম্পাস ছাড়ার পর তার অনুসারীরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েন। সুমন সরকার ও তারেক হসলিমী এই দুই গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। শামশেদ কোনো গ্রুপেই যোগ দেননি। এ কারণে তাকে হল থেকে বের করে সিট দখলের চেষ্টা করেন সুমন সরকার ও তারেক হসলিমীর অনুসারীরা।
শাবি ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, রোববার রাতে সুমন সরকার ও তারেক হসলিমীর অনুসারীরা শামশেদকে কক্ষ থেকে বের করে দিতে যান। এ সময় ছাত্রলীগের খলিলুর রহমান ও সজিবুর রহমান গ্রুপের অনুসারীরা তাকে হলে রাখার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে গ্রুপগুলোর মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও উত্তেজনা দেখা দেয়। রাতেই রড, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দেয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ। তবে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে শামশেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত রাতে আমি রুমে ছিলাম। হঠাৎ আমাদের গ্রুপের কয়েকজন সিনিয়র-জুনিয়র সদস্য রুমে এসে আমাকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলে। তারা আমার বিছানা-বালিশসহ জিনিসপত্র রুম থেকে নিচে নিয়ে যায়। কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, আমি গ্রুপের মিছিল ও মিটিংয়ে সক্রিয় না হওয়ায় তারা আমাকে হল থেকে বের করে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই হলে আছি। বৈধভাবেই আছি।
‘শুরুতে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিনের অনুসারী ছিলাম। পরে আমাদের গ্রুপ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এরপর থেকে আমি আর তেমন সক্রিয় নই। আমি জাতীয় প্রোগ্রামগুলোতে উপস্থিত থাকি। কিন্তু পড়াশোনার চাপে বাকি প্রোগ্রামগুলোতে কম যাওয়া হয়। এই অজুহাতে তারা আমাকে হল থেকে বের করে দিচ্ছিল।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে সুমন সরকার বলেন, ‘শামশেদ আমাদের গ্রুপের কেউ না। তবে সে আমাদের গ্রুপের রুমে থাকে। সে আমাদের গ্রুপের ভেতরে বিদ্রোহী কর্মী বানাতে চেয়েছিল এবং গ্রুপের অনেক ক্ষতিও করেছে। তাই তাকে হল থেকে বের করে দিতে চেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘তাকে হল থেকে বের করে দেয়ার সময় সিনিয়র-জুনিয়রদের সঙ্গে একটু ঝামেলা হয়েছে। আমরা তাদের মিলিয়ে দিয়ে সমস্যার মীমাংসা করে দিয়েছি।’
ছাত্রলীগের আরেক গ্রুপের নেতা খলিলুর রহমান বলেন, ‘হলে সিট নিয়ে অন্য গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হইছে। জুনিয়র বেয়াদবি করেছে সিনিয়রের সঙ্গে। আমরা সমস্যাটির সমাধান করে দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে শাহপরান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘এক আবাসিক ছাত্রের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে শুনেছি। আমরা সবাইকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।’
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় সৈয়দ মুজতবা আলী হলে ওয়াশরুম ব্যবহার নিয়ে শাবি ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক সজিবুর রহমানের অনুসারী শিমুল মিয়ার সঙ্গে ছাত্রলীগের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহসভাপতি মামুন শাহ গ্রুপের অনুসারী মুসলিম ভূঁইয়ার হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। এ সময় হলের জিনিসপত্র ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।