বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাকে এবার আর খুঁজবেন না মরিয়ম

  •    
  • ১৭ অক্টোবর, ২০২২ ১৭:৪৬

মরিয়ম বলেন, ‘আমার বাবা ১৩ বছর বয়সে মারা গেছেন। মা আমাদের মানুষ করেছেন। আমরা একটি সুন্দর মাকে চিনতাম। কিন্তু এখন চিনছি না। মায়ের বদনাম করতে পারছি না, তাই আর কিছু মিডিয়াকে বলব না।’

খুলনার মহেশ্বরপাশা থেকে আত্মগোপনে যাওয়ার পর উদ্ধার হয়ে ফের বাড়ি ছেড়ে যাওয়া রহিমা বেগমকে আর খুঁজবেন না বলে জানিয়েছেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান।

তিনি নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, মা কোথায় গেছেন জানেন না। ঠিক কবে বাড়ি ছেড়েছেন তা-ও নিশ্চিত নন। সবশেষ তিনি খুলনা শহরের বয়রায় ছোট মেয়ে আদুরী আক্তারের ভাড়া বাড়িতে ছিলেন।

দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমবার নিখোঁজ হয়েছিলেন রহিমা। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমির বিরোধের জেরে তাকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে ফেসবুক, সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ করেন মরিয়ম।

এ ঘটনায় মামলাও করা হয়, গ্রেপ্তার হন রহিমার দ্বিতীয় স্বামী, প্রতিবেশীসহ ছয়জন।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে একটি বাড়ি থেকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে অক্ষত ও স্বাভাবিক অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রহিমাকে। আদালতে তিনি অপহরণ হয়েছিলেন বলে জানালেও পরে মরিয়মই নিউজবাংলাকে জানান, ঘটনাটি অপহরণ ছিল না।

এসব ঘটনা বেশ আলোচনার জন্ম দেয় সারা দেশে। সেটির রেশ কাটতে না কাটতেই ফের লাপাত্তা রহিমা বেগম।

আরও পড়ুন: মায়ের অপহরণের দাবি ‘মিথ্যা’, জবানবন্দি বদলাতে চান মরিয়ম

মরিয়ম সোমবার দুপুরে ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ভাই সাদী আমাকে জানিয়েছিল যে মাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে আদুরীর কাছে ফোন করে জানতে পারি মাকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় গেছে, কেউ জানি না। এবার আর মাকে খুঁজবো না।’

মরিয়ম জানান, ফরিদপুর থেকে উদ্ধার হওয়ার পর আদালত থেকে রহিমাকে আদুরীর জিম্মায় দেয়া হয়। তবে সব ভাই-বোনদের সিদ্ধান্তে রহিমা ও আদুরীকে তিনি ঢাকায় নিয়ে আসেন।

ঢাকায় রহিমার চিকিৎসা চলছিল জানিয়ে মরিয়ম বলেন, ‘মা আদালতে দাবি করেছিল, তাকে অপহরণের সময়ে মারধর করা হয়েছিল। তাই ঢাকাতে নিয়ে তাকে আমরা চিকিৎসকের কাছে যাই। তবে চিকিৎসক জানিয়েছেন তার গায়ে কোনো স্পট নেই। পরে মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। তারা জানিয়েছেন কোনো সমস্যা নাই।

‘তিনি কান্নাকাটি করতেন, বিশৃঙ্খলা করতেন, আমাদের সঙ্গে থাকতে চাইতেন না। পরে ১ অক্টোবর ছোট বোন আদুরী ও মাকে খুলনায় পাঠানো হয়। আজ আদুরী জানিয়েছে মা দুই বা এক দিন আগে নিখোঁজ হয়েছে। কখন নিখোঁজ হয়েছে, সঠিক টাইম বলতে পারব না।’

রহিমা বদলে গেছেন বলে দাবি করেছেন মরিয়ম। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ১৩ বছর বয়সে মারা গেছেন। মা আমাদের মানুষ করেছেন। আমরা একটি সুন্দর মাকে চিনতাম। কিন্তু এখন চিনছি না। মায়ের বদনাম করতে পারছি না, তাই আর কিছু মিডিয়াকে বলব না।’

ফরিদপুর থেকে উদ্ধারের পর রহিমা বেগমকে নেয়া হচ্ছিল খুলনায়। ফাইল ছবি: নিউজবাংলা

মায়ের বিরুদ্ধ জবানবন্দি দিতে ভাইয়ের আদালতে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। যদি আদালত থেকে আমাকেও চায়, আমি সব সত্য বলব। আইন-আদালতের ওপর আমাদের আস্থা আছে।’

এদিকে খুলনা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, পিবিআই কার্যালয়ে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে গিয়ে মায়ের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেয়ার আগ্রহ জানান মরিয়মের ভাই মিরাজ আল সাদী। তাকে সোমবার বিকেলে খুলনা মে‌ট্রোপ‌লিটন ম‌্যা‌জি‌স্ট্রেট মো. স‌রোয়ার আহ‌ম্মেদের আদালতে নেয়া হয়। সেখানে তিনি ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

মুশফিকুর বলেন, ‘রহিমা বেগম বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থেকে মিথ্যা কথা বলেছিলেন। এটা মিরাজের ইগোতে লেগেছে। এ জন্য তিনি স্বেচ্ছায় মায়ের বিচার চেয়ে আদালতে জবানবন্দি দিতে চেয়েছেন।’

রহিমার ফের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আদালত রহিমাকে আমাদের জিম্মায় দেয়নি। তাই তিনি কোথায় আছেন, সেটি আমাদের দেখার বিষয় না। আদালত তাকে তার মেয়ে আদুরীর জিম্মায় দিয়েছিল। তাই তিনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’

আদুরী আক্তারের কাছে তার মায়ের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো জবাব দেননি। পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘এসব আপনাদের কেন বলব?’

রহিমার ছেলে মিরাজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মা বোনদের কাছে আছে, নাকি অন্য কোথাও আছে জানি না। সে যদি কোথাও চলে যায় তো যাক। সে মারা গেলেও আমি তাকে খুঁজব না।’

যা ঘটেছিল

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে রহিমাকে উদ্ধার করে খুলনার দৌলতপুর থানায় নেয় পুলিশের একটি দল।

পুলিশ জানায়, রহিমার খুলনার বাড়িতে বেশ কয়েক বছর আগে কুদ্দুস মোল্লা নামের এক ব্যক্তি ভাড়া থাকতেন। তার বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুরে। ওই বাড়িতেই রহিমা বেগম আত্মগোপনে ছিলেন।

এর এক দিন আগেই ময়মনসিংহে ১২ দিন আগে উদ্ধার করা একটি মরদেহকে মায়ের বলে দাবি করেন মরিয়ম মান্নানসহ রহিমা বেগমের তিন মেয়ে।

দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে রহিমা নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। রাত সোয়া ২টার দিকে দৌলতপুর থানায় অপহরণের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদী।

সে জিডি থেকে জানা যায়, নিখোঁজের সময় রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বেল্লাল হাওলাদার বাড়িতে ছিলেন। পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নেমেছিলেন রহিমা। দীর্ঘ সময় পরও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

মাকে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে ২৮ আগস্ট দৌলতপুর থানায় মামলা করেন রহিমার মেয়ে আদুরী।

রহিমা অপহৃত হয়েছেন দাবি করে ১ সেপ্টেম্বর খুলনায় সংবাদ সম্মেলন করেন মরিয়ম। তিনি অভিযোগ করেন, রহিমার সঙ্গে জমি নিয়ে প্রতিবেশীদের মামলা চলছে। এ কারণে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে তাদের ধারণা।

এরপর অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বেল্লাল হাওলাদার এবং প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিুকল ইসলাম পলাশ, মোহাম্মাদ জুয়েল ও হেলাল শরীফ।

আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর রহিমা অপহরণ মামলা পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেয়। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই।

রহিমাকে উদ্ধারের পর গত ৪ অক্টোবর অপহরণ মামলার ৪ আসামি আদালত থেকে জামিন পান। তবে মামলার রহিমার স্বামী বেলাল হাওলাদার ও আরেক আসামি হেলাল শরীফ এখনও কারাগারে।

এ বিভাগের আরো খবর