অবসরে পাঠানো তথ্যসচিব মকবুল হোসেন বলেছেন, বিরোধী পক্ষের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ ছিল না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কখনও স্বচক্ষে দেখেননি আর দেখার ইচ্ছাও নেই।
সরকার কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার কিছুই জানা নেই জানিয়ে তিনি এ-ও বলেছেন, এই সিদ্ধান্তে তার নাখোশ হওয়ার সুযোগ নেই, আক্ষেপও নেই।
রোববার ‘জনস্বার্থে’ চাকরি থেকে অবসরে পাঠানোর পরদিন শেষবারের মতো নিজ দপ্তরে আসেন মকবুল। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
মকবুলকে অবসরে পাঠানোর কারণ হিসেবে কিছু জানানো হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। তবে নানা গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে তার সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগের বিষয়ে ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাজ্য সফরকালে তারেক রহমানের সঙ্গে তার বৈঠকের গুঞ্জনও ছড়িয়েছে।
একজন গণমাধ্যমকর্মী তার কাছে জানতে চান, তিনি লন্ডন সফরে থাকার সময় তারেক রহমানের সঙ্গে তার কোনো বৈঠক হয়েছে কিনা।
জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা লন্ডনে গিয়েছি গত মার্চ মাসে। আমরা একটা টিম নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের আশিকুন্নবী আছেন, আমাদের প্রেস… তাকে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘হয় কী, হাতি যখন পাঁকে পড়ে, চামচিকাও লাথি মারে- এমন একটা কথা আছে না। সেটা তো মার্চ মাসে হয়েছে। এখন সেই প্রশ্নটা আসে কী করে? আমি তারেক রহমানকে কোনো দিন দেখেছি বলে মনে হয় না। তারেক রহমানকে দেখার ইচ্ছাও আমার নেই।’
বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ হলে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে আপত্তি নেই জানিয়ে মকবুল বলেন, ‘যে সারা জীবন একটাতে বিলং করল, যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে, সে বিএনপির লোকের সঙ্গে কানেকশন রাখবে, এটা হয় না। এটা হতে পারে?’
সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা থাকলে সেটি গণমাধ্যমকর্মীরা প্রচার করতে পারবেন বলেও জানান মকবুল। বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে কোনো অসুবিধা নাই।’
জানি না কেন অবসর, তবে অতৃপ্তি দেখানোর সুযোগ নেই
কেন অবসরের সিদ্ধান্ত, সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই বলেও জানান মকবুল। বলেন, ‘কারণটা আমি জানি না কেন আমাকে অবসরে পাঠানো হলো।…আমার জানা নেই, আমার জ্ঞানের ভেতর নেই, আমার কোনো অপরাধ ছিল কি না বা কোন অপরাধের কারণে অবসরে দেয়া হয়েছে, সেটি আমার জানা নেই৷ ‘
তবে তিনি স্বীকার করেন, আচমকা আসা এই সিদ্ধান্তে তিনি চমকে গেছেন। এর জন্য তার প্রস্তুতি ছিল না জানিয়ে বলেন, ‘কখনই না, নেভার।’
তিনি এ-ও বলেন, ‘নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে৷ হয়তো রাষ্ট্রের কাছে যেটা আছে সেটা আমি জানি না।’
তবে এই সিদ্ধান্তে আক্ষেপ নেই বলেও জানিয়ে দিলেন মকবুল। বলেন, ‘যেহেতু এটি সরকার পারে, আইনের ভেতরেই পারে, সে জন্য এটি কার্যকর। আমি সরকারের প্রতি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল।
‘কিন্তু সরকারের এ রাইট আছে। এ বিষয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অতৃপ্তি দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।’
‘জ্ঞানত কোনো অপরাধ করিনি’
মকবুল বলেন, ‘আমি যতদিন এখানে কাজ করেছি, সততার সঙ্গে করেছি, নিষ্ঠার সঙ্গে করেছি, সরকারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।
‘প্রত্যেকটি মানুষ নিজেই সবচেয়ে বড় বিচারক। সুতরাং আমি সেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে সব সময় প্রস্তুত।’
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে কোনো দূরত্ব তৈরি হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষ অনেক কথাই বলে, অনেক কিছুই শোনা যায়; শোনা কথা বিশ্বাস না করাই ভালো। আমার পক্ষ থেকে মন্ত্রীর সঙ্গে কেন দূরত্ব থাকবে? আমরা তো সবাই মিলেই কাজ করি। দূরত্বের কথা কেন আসছে আমি জানি না, আমি ওনাকে সম্মান করি।
‘আমরা এখানে চেষ্টা করেছি, আমাদের অফিস টাইমের পরেও সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য, এ মন্ত্রণালয়ের মানসম্মান-ইজ্জত বাড়ানোর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী ছিলাম। আমি এমন কোনো দিন নেই যে দুই ঘণ্টা বেশি কাজ করিনি৷ ’
মকবুল হোসেন গত বছরের ৩১ মে সচিব হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। তার আগে তিনি যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবেও।
তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ১০ম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন।