দেশের ৫৭ জেলা পরিষদ নির্বাচনে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, ‘আজকে গোপন কক্ষে (ভোটার ছাড়া) কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তি যাননি।’ ভোটাররা সুশৃঙ্খল ও ভদ্রভাবে ভোট দিয়েছেন।’
জেলা পরিষদ ভোট শেষে সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সোমবার দেশের ৫৭টি জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে প্রতি উপজেলা সদরে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে।
দ্বিতীয়বারের এ ভোটে চেয়ারম্যান পদে ৯২ জন, সদস্য পদে ১ হাজার ৪৮৫ জন ও সংরক্ষিত পদে ৬০৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটের আগেই ২৬ জন চেয়ারম্যান, ১৮ মহিলা সদস্য এবং ৬৫ জন সাধারণ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।
৪৬২টি ভোটকেন্দ্রের ৯২৫টি ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছিলেন ৬০ হাজার ৮৬৬ ভোটার।
এদিকে গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ঢাকার নির্বাচন ভবনে মনিটরিং সেল গঠন করে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। ভোটের অনিয়ম চোখে পড়ায় পুরো আসনের ভোট বন্ধ করে দেয় ইসি। জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছিল কমিশন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনের শুরু থেকেই আমরা মনিটরিং সেলে অবস্থান করেছি। আজকে আমাদের পর্যবেক্ষণ, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়ম, সহিংসতা বা গোলযোগ, গণ্ডগোলের কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। আমরা দেখেছি এবং টেলিফোনেও যে সংবাদগুলো পেয়েছি নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর ছিল।’
জেলা পরিষদ ভোটে কমিশন সন্তুষ্ট জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আমি এবং সহকর্মীরা সন্তুষ্ট। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সিসিটিভির ব্যবহার আমাদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা ভোট পরিচালনায়। আগামী দিনে আপনাদের সবাইকে আরও ভালো সুযোগ করে দেবে সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের।’
বর্তমান কমিশন স্বচ্ছ নির্বাচন চায় উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘শুধু ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। আজকে গোপন কক্ষে কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তি যাননি। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে শিক্ষিত, মার্জিত ভোটাররা ভদ্রভাবে ভোট দিয়েছেন।’
২৬ জন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিইসি বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা বক্তব্য রাখব না। এই বিশ্লেষণে আমরা যাইনি। এটা আমাদের নয়। রাজনীতিবিদরাই বুঝবেন। এটা নিয়ে আমরা মন্তব্য করব না।’
গাইবান্ধায় যেটা হয়ে গেছে সেটা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হয়েছে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সিসিটিভির মাধ্যমে আমাদের পর্যবেক্ষণ ছিল। তারপরে বেশ গুরুতর অনিয়ম আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। কমিশন বাধ্য হয়ে নির্বাচনটা বন্ধ করে দিয়েছে। তো সেখান থেকে একটা মেসেজ এসেছে, যে সিসি ক্যামেরা দিয়ে যেভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়, যদি যারা ভোটার বা প্রার্থী; তারা যদি গুরুতর অনিয়ম করেন, তাহলে নির্বাচন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমাদের মনে হয়, ওটার একটা ইতিবাচক প্রভাব এই নির্বাচনে পড়েছে।’
সিসি ক্যামেরা হ্যাং করেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন,'হ্যাং করলেও তা সংশোধন করা হয়েছে। এ জন্য ভোট দিতে পারেনি তা নয়। হাজার হাজার ক্যামেরা বসানো হচ্ছে, সেখানে দু-একটা এমন হতে পারে।'
অনেকের যেমন আঙুলের ছাপ প্রথমে মেলেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'পরে মিলেছে। একজনও ভোট দিতে পারেনি- এমন হয়নি।' তদন্ত রিপোর্টের পর গাইবান্ধার ভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।