গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সাতটি বেইলি ব্রিজ এখন হবিগঞ্জবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিনের পুরোনো ব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগুলো দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও সাধারণ লোকজন। যেকোনো সময় ব্রিজ ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
সড়ক বিভাগ বলছে, একটি বেইলি ব্রিজ অপসারণ করে আরসিসি সেতু করার জন্য দরপত্র প্রক্রিয়াধীন। বাকি ছয়টির জন্যও কার্যক্রম হাতে রয়েছে।
হবিগঞ্জ শহরের উত্তর দিকে পূর্ব-পশ্চিমে বয়ে চলা খোয়াই নদীর ওপর ১৯৮৪ সালে নির্মাণ করা হয় উমদা মিয়া বেইলি ব্রিজ। এই ব্রিজ দিয়েই বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও সিলেটগামী বাস ও পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করত।
এই ব্রিজটি দুর্বল হয়ে পড়লে ২০০৫ সালে বিকল্প হিসেবে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য উমদা মিয়া ব্রিজের পূর্বদিকে কিবরিয়া বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের সময় পুরোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার হওয়ায় অল্প দিনেই ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বর্তমানে ব্রিজ দুটির অবস্থা নড়বড়ে হওয়ায় এ দুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে সড়ক বিভাগ। তবু প্রতিদিন এই ব্রিজ দুটি দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষকে।
জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে এমন সাতটি বেইলি ব্রিজ আছে। সব কটিই চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো হলো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জে খোয়াই নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজ, হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কের রত্না ও শুঁটকি ব্রিজ, হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কের বালিকাল ব্রিজ ও চুনারুঘাটে খোয়াই নদীর ওপর নির্মিত কাজিরখিল ব্রিজ।
পুরাতন এই ব্রিজগুলোর স্টিল প্লেট, গার্ড লক, স্ক্রুসহ যাবতীয় যন্ত্রাংশ স্থানচ্যুত হয়ে পড়েছে। ব্রিজের স্থায়ী পিলারগুলো দুর্বল হয়ে পড়ায় লাগানো হয়েছে লোহার আলাদা অস্থায়ী পিলার। বৃষ্টির দিনে ব্রিজগুলো আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করে মানুষজন।
নবীগঞ্জ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন মোটরসাইকেল দিয়ে যাতায়াত করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি সপ্তাহে ছয় দিন শহর থেকে নবীগঞ্জ যাই। খোয়াই নদীর দুইটা ব্রিজই ঝুঁকিপূর্ণ। সাইকেল একদিকে নিলে আরেকদিকে চলে যায়। একই অবস্থা বালিকাল ব্রিজেরও।’
এই রোডের সিএনজিচালক রুবেল মিয়া বলেন, ‘ব্রিজের প্লেটগুলো উঁচু-নিচু হয়ে গেছে। এ ছাড়া বৃষ্টির দিন হলে তো আর কথাই নেই। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হয়ে যায়।’
বানিয়াচং সড়কের সিএনজিচালক আব্দুল্লাহ মামুন বলেন, ‘রত্না আর শুঁটকি ব্রিজে উঠলে থরথর করে কাঁপে। যেকোনো সময় ব্রিজ দুটি ভেঙে পড়তে পারে। এ ছাড়া রত্না ব্রিজ দিয়ে একটা একটা করে গাড়ি পারাপার হওয়ায় এখানে প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকে।’
হবিগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘বেইলি ব্রিজ এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ। জেলায় সড়ক বিভাগের আওতায় সাতটি বেইলি ব্রিজ রয়েছে। আপাতত একটি ব্রিজ অপসারণ করে নতুন আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাকি ছয়টার বিষয়েও সিলেট জোনের আওতায় আমব্রেলা প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।’
ঝুঁকির পাশাপাশি এসব বেইলি ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি বছর বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। বেইলি ব্রিজ ৫ টনের বেশি ওজন বহন করতে সক্ষম নয়। এ কারণে প্রতিটি ব্রিজের প্রবেশমুখে ৫ টনের বেশি পণ্য বহনকারী যানবাহন প্রবেশে কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে সড়ক বিভাগ। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিনিয়ত ৫ টনের চেয়ে ভারী যানবাহন যাতায়াত করছে।