রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী এলাকায় পুলিশের ককটেল নিষ্ক্রিয় করার ছবি মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশ-বিদেশে ছড়ানোর অভিযোগে সাবেক ছাত্রদল নেতা মফিজুর রহমান আশিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার পল্লবী থেকে তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আশিকের বিরুদ্ধে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এই মামলায় তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইন্টেলিজেন্স এনালাইসিস বিভাগের উপ-কমিশনার মাহমুদুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে হেয় করার উদ্দেশ্যে ককটেল নিষ্ক্রিয় করার ছবিগুলো মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্নজনকে দেন আশিক। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ফোনে ককটেল নিষ্ক্রিয় করার ছবি পাওয়া গেছে।
‘আশিকের কাছ থেকেই ছবিগুলো দেশে ও দেশের বাইরে থাকা সরকারবিরোধীদের কাছে পাঠানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। সরকারকে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধবিরোধী অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তিনি মিথ্যা তথ্য ছড়ান, যা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশিক স্বীকার করেছেন।’
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যদের তৎপরতার এসব ছবি দিয়ে ছড়ানো হচ্ছে গুজব। ছবি: সংগৃহীত
মাহমুদুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আশিক নিজে ছবিগুলো তোলেন এবং ঘটনা যা না তার থেকে আরও বড় করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজে পোস্ট করেছেন এবং দেশ-বিদেশে ছড়িয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে হেয় করা ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই কাজটি করেছেন তিনি।
‘রাষ্ট্রবিরোধী আরও অনেক কাজে তার জড়িত থাকার তথ্য আমরা পেয়েছি। তদন্তে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে আমরা মনে করছি।’
বৃহস্পতিবার রাতে পল্লবী ৬ নম্বর সেক্টরের বড় মসজিদ গলিতে একটি ফার্মেসি লক্ষ্য করে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। তার একটি বিস্ফোরিত হয় অপরটি অবিস্ফোরিত থেকে যায়। থানা পুলিশের মাধ্যমে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বম্ব ডিসপোজাল টিমকে খবর দেয়া হয়। তারা এসে ককটেলটি নিষ্ক্রিয় করে।
উপ-কমিশনার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘এক লোক চাঁদা চেয়ে না পেয়ে ওই দোকানে ককটেল ছুড়ে মারে। একটি বিস্ফোরিত হলেও আরেকটি বিস্ফোরিত হয়নি। অবিস্ফোরিত ককটেলটি নিষ্ক্রিয় করার জন্য কাউন্টার টেরোরিজমের বম্ব ডিসপোজাল টিম সেখানে যায়। বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ককটেলটি নিষ্ক্রিয় করার সময় ঘটনাস্থলের পাশের বাসা থেকে ছবিগুলো ধারণ করেন আশিক। তিনি প্রকৃত ঘটনা তুলে না ধরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ছবিগুলো প্রকাশ করেন।’
আরও পড়ুন: মিরপুরে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পেছনে কী?
কাউন্টার টেরোরিজম সূত্র জানায়, ‘দেশে জঙ্গি তৎপরতা প্রমাণের জন্য গভীর রাতে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা’ শিরোনামে একটি লেখা আশিক তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। এতে যুক্ত করে দেন ককটেল নিষ্ক্রিয় করার ছবি।
ছবিগুলো দিয়ে তিনি লেখেন, ‘রাত ৩টায় দেশে জঙ্গি তৎপরতা প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। এই অপতৎপরতার অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার ঢাকার মিরপুরের ৬ নম্বরের একটি রাস্তায় এতিমখানার সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা।
‘গভীর রাতে ওই এলাকায় দুটি গাড়িতে করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও পুলিশের সদস্যরা আসেন। এখানে নিজেরাই বোমা রেখে বিস্ফোরণ ঘটানোর পর আবার তারাই ছবি তুলছেন। দেশে জঙ্গি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে সেটা প্রমাণের জন্য সরকার এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। এটাই তার বাস্তব প্রমাণ।’
এরপর একই তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্য থেকে পরিচালিত একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম।