গণপরিবহনে নারীদের লাঞ্ছনার খবর নতুন নয়। অনেক সময় আসামি ধরা পড়লেও বেশির ভাগই প্রমাণ না থাকায় নেয়া যায় না ব্যবস্থা। তাই নারীদের বাসে চলাচল সুগম করতে রাজধানীর বাসগুলো পর্যায়ক্রমে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে।
সরকারের অর্থায়নে কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি সংস্থা দীপ্ত ফাউন্ডেশন।
এখন পর্যন্ত পাঁচটি বাস কোম্পানি ও ভিন্ন রুটের ১০৮টি বাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
বাসগুলো হলো চন্দ্রা থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারগামী রাজধানী সুপার সার্ভিস লিমিটেড, গাবতলী থেকে গাজীপুরগামী বসুমতি ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড, মোহাম্মদপুর থেকে আবদুল্লাহপুরগামী প্রজাপতি পরিবহন লিমিটেড, ঘাটারচর থেকে আব্দুল্লাহপুরগামী পরিস্থান পরিবহনের ২৫টি করে বাসে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি।
এ ছাড়া গাবতলী থেকে সায়েদাবাদগামী গাবতলী এক্সপ্রেসের ৮টি বাসেও লাগানো হয়েছে ক্যামেরা।
কর্তৃপক্ষ বলছে, পর্যায়ক্রমে সব বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
রোববার গাবতলীতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনভেনশন সেন্টারে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘গণপরিবহনে নারীর নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি’ আওতায় গণপরিবহনে সিসিটিভি স্থাপন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, ‘সিসিটিভি স্থাপনের মাধ্যমে গণপরিবহন নারীবান্ধব ও নিরাপদ হবে। নারীরা সিসি ক্যামেরা সংযুক্ত বাসে উঠতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। সিসি ক্যামেরা থাকায় এসব বাসের সাধারণ যাত্রীরাও সতর্ক থাকবে এবং তাদের মাঝে সচেতনতা তৈরি হবে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যায়ক্রমে সব বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।’
ফজিলাতুন নেসা বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে নারীরা ৯৯৯ ও ১০৯-এর মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন। হয়রানি বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে সিসিটিভির ফুটেজ আদালতে আলামত ও প্রমাণক হিসেবে ব্যবহৃত হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নারীবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের ফলে আজ শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র ও উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে নারীর পদচারণ বেড়েছে বহু গুণ।’
নারীকে প্রতিদিন কর্মস্থল ও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়। নারীরা গণপরিবহনের মাধ্যমে স্বল্প খরচে কর্মস্থল ও নিজ নিজ বাসস্থানে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু নারীদের জন্য সরকারের এত উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণের পরও গণপরিবহনে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ঘটছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা।
তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় নারীরা অসম্মানজনক আচরণেরও শিকার হচ্ছেন। যার ফলে সভ্যতার এ যুগে নারীরা চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। এসব ঘটনা তাদের স্বাধীন চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করছে। গণপরিবহনে এশিয়ার অন্যান্য দেশের নারীরা নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকে।’
প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে প্রথম বাংলাদেশে কর্মজীবী নারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক বাস চালু করেন। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের সব গণপরিবহন নিরাপদ ও নারীবান্ধব করে তুলছে। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে নারীরা নিরাপদ থাকে। নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।’
তিনি বাস মালিক সমিতির উদ্দেশে বলেন, ‘চালকদের নিয়োগদানের পূর্বে তাদের সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে যেন তারা অপরাধ করলে তাদের দ্রুত শনাক্ত করা যায়। যাত্রীদের সঙ্গে গাড়ির চালক ও স্টাফদের উত্তম আচরণ কেমন হবে, সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’