বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে বাংলাদেশেও অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মানুষ কষ্টে থাকলেও না খেয়ে কেউ মারা যায়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এভাবেই চলতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আর্থিক সংকটে আছি, এতে সন্দেহ নেই। তবে অনেক ক্ষেত্রে আমরা স্বস্তিতেও আছি। আমাদের খাদ্যের তেমন সমস্যা নেই। অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো আছে।
‘মানুষ কষ্টে আছে, এটাও ঠিক। তবে একজন মানুষও না খেয়ে কষ্টে মারা যায়নি। এর মধ্যেই চলতে হবে।’
এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাম্প্রতিক বিভাগীয় সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। গাজীপুর থেকে ঢাকার বিমানবন্দর মোড় পর্যন্ত চলা বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কথা বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা এবং দেশের ওপর এর সম্ভাব্য চাপ নিয়েও। জানান দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে চিন্তিত নন।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এক যুগ ধরে স্বস্তিতেই কেটেছে অর্থনীতি। উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বাড়তে থাকা, নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণ, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নাম আসা, রিজার্ভ, রপ্তানি, রেমিট্যান্স বাড়তে থাকা, বিদ্যুতের অভাবনীয় উন্নয়ন- এসব কারণে বিরোধীদের পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে চলার মধ্যে হঠাৎ ঘটেছে ছন্দঃপতন, যার কারণ আবার দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি।
তবে বিশ্বজড়ে দুই বছরের করোনা মহামারি শেষে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, সে সময় ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে যে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তাতে ২০২৩ সালে বিশ্ব মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশে দেশে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও। বাংলাদেশেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
চাপ এতটাই প্রকট হয়েছে যে, সরকার জ্বালানি সংকটে লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং রাজধানীতে এক থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না, যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে আওয়ামী লীগের গর্ব ছিল এক যুগ ধরে।
গত ছয় মাসের কম সময়ে রিজার্ভ কমেছে ১২ বিলিয়ন ডলারের মতো এবং সেটি ক্রমেই নিম্নমুখী, যা এক যুগে নয় গুণ বেড়েছিল।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশে রিজার্ভ নিয়ে খুব চিন্তিত নই। বর্তমানে যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে আগামী পাঁচ-ছয় মাস চলা সম্ভব। এই সংকট কাটাতেই কিছু বেগ পেতে হচ্ছে। সে জন্য সরকারের পদত্যাগ চাইতে হবে এমন কথা নয়।’
বিএনপি কোন নিয়মে সরকারের পদত্যাগ চায়- সেই প্রশ্নও রাখেন তিনি।