চলতি মাসের শুরুতে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ে রাজধানীসহ চার বিভাগে ব্ল্যাকআউটের ঘটনায় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) দুই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সচিবালয়ে রোববার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী জানান, এই দুই কর্মকর্তা পিজিসিবির উপসহকারী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী পদমর্যাদার।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনায় মোট তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে পিজিসিবির তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী এই দুই কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই তাদের চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
‘এ ঘটনায় বিতরণ সংস্থার আরও কয়েকজন কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলা থাকতে পারে। অন্যান্য তদন্তে বাকি যারা জড়িত আছে, তাদের নামও বেরিয়ে আসবে। তখন তাদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
দুই কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার অংশ হিসেবে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
পিজিসিবির ওই দুই কর্মকর্তা হলেন- সিস্টেম প্রোটেকশন অ্যান্ড মিটারিং ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আল্লামা হাসান বখতিয়ার এবং সহকারী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর আসলাম নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে ৪ অক্টোবর ঢাকাসহ দেশের প্রায় অর্ধেক অংশ দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। সেদিন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড ফেল করার পর প্রায় আট ঘণ্টা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটায় দেশের কোটি কোটি মানুষ।
এর আগে কয়েকবার ছোট পরিসরে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটে ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর। সেবার সারা দেশ ১৭ ঘণ্টা ব্ল্যাকআউট ছিল।
বিদ্যুৎপ্রবাহ লাইনে চলমান ফ্রিকোয়েন্সিতে তারতম্য ঘটলেই ব্ল্যাকআউটের ঘটনা ঘটতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বড় কোনো বিপর্যয় এড়াতে নিজ থেকেই ‘গ্রিড ট্রিপ’ ঘটে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বাংলাদেশে ৫০ মেগাহার্টজ তরঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। কোনো কারণে এটি বেড়ে কিংবা কমে গেলে গ্রিড ট্রিপের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ৪ অক্টোবরের ব্ল্যাকআউটের জন্য গ্রিড ট্রিপকেই দায়ী করেছিল এ ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান এ ঘটনার দুই দিন পর নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুটি সাবস্টেশনের মাঝখানে যে ইন্টারকানেকশন রয়েছে, সেখানেই মূলত সমস্যা, তবে সমস্যাটা কেন হলো, সেটা এখনো জানা যায়নি।’
তদন্ত কমিটির প্রধান প্রকৌশলী ইয়াকুব এলাহি চৌধুরী সে সময় জানান, দেশের কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওয়ার কন্টোল রুমগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সব পরীক্ষা শেষে বিপর্যয়ের কারণ জানা যাবে।
এর আগে ২০১৪ সালের নভেম্বরে ব্ল্যাকআউটের পর ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদনে কারিগরি ত্রুটি, দায়িত্ব পালনে সীমাবদ্ধতা এবং নির্দেশ পালনে অবহেলাকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল করা, কারিগরি ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ২০ দফা সুপারিশ করা হয়, তবে আট বছরেও বেশির ভাগ সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি।
২০১৭ সালে গ্রিড বিপর্যয়ে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল দেশের উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৩২ জেলা। গত মাসে গ্রিড বিপর্যয়ে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল অঞ্চল ৪০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।
এর আগে ২০০২, ২০০৭, ২০০৯ সালেও গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে।