বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যেখানে রাস্তাই গাড়ি রাখার জায়গা

  •    
  • ১৬ অক্টোবর, ২০২২ ০৮:২৪

তেজগাঁও থেকে শুরু করে রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় রাস্তায় অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। কোথাও অফিস-আদালত, কোথাও বিশ্ববিদ্যালয়, কোথাও হাসপাতালের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় গাড়ি ও অফিসের পিক-ড্রপের বাস। সিটি করপোরেশন বলছে, তাদের লোকবল নেই এগুলো দেখার।

এক মাস আগে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকার বেশির ভাগ ফুটপাত নতুন করে তৈরির কাজ শেষ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এই অঞ্চল দিয়ে চলাচলকারী মানুষের আশা ছিল এবার তারা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে।

তাদের সেই আশার গুড়েবালি। রাস্তা ও ফুটপাত উন্নত হলেও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সামনে গড়ে ওঠা অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে বেশ কয়েকটি জায়গায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। প্রতিষ্ঠানগুলো রাস্তার একটি অংশে দখল করে তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি ও স্টাফ বাস পার্ক করে রাখে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। এ কারণে দুই লেনের এই রাস্তা সরু হয়ে এক লেনে পরিণত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তেজগাঁওয়ের লাভ রোডের শমরিতা হাসপাতাল এবং আহ্‌ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি ও ভূমি অফিসের সামনে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে দিনের বেশির ভাগ সময় যানজট লেগে থাকে। বিজয় সরণি থেকে আসা গাড়ি প্রথম যানজটে পড়ে শমরিতা হাসপাতালের সামনে। সেখানে হাসপাতালে আসা রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, রোগীদের ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে দিনের বেশির ভাগ সময় রাস্তায় সৃষ্টি হয় যানজট।

এই যানজট পার হলেই কয়েক শ গজের মধ্যে আহ্‌ছানউল্লা ইউনিভার্সিটির সামনে পড়তে হয় দ্বিতীয় যানজটে।

কারওয়ান বাজারে রাস্তায় গড়ে ওঠা অবৈধ গাড়ি পাার্কিং। ছবি: নিউজবাংলা

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের আনা-নেয়ার কাজ করে বিআরটিসির দ্বিতল বাস। সকালে শিক্ষার্থীদের আনার পর এই বাসগুলো রাস্তা দখল করে দুপুর পর্যন্ত সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীত পাশে অবস্থিত জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট। সেখানে আসা রোগীদের ব্যক্তিগত গাড়ি রাখা হয় হাসপাতালের সামনের রাস্তায়। রাস্তার দুই পাশে গাড়ির অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে এখানে রাস্তা হয়ে যায় সংকীর্ণ।

আশপাশে আছে আরও কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের সামনের রাস্তায় রাখে পিকআপ ভ্যান। এ কারণে এখানে দিনের বেশির ভাগ সময় স্থায়ী যানজট লেগে থাকে।

এরপর আরেক দফা যানজট সৃষ্টি হয় ভূমি অফিসের সামনে।

তেজগাঁও এলাকার ভেতর রিকশা চালান রমিজ মিয়া। এই এলাকার রাস্তায় যানজট কেন হয় জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই এলাকায় দিনের বেলায় সবচেয়ে বেশি জ্যাম থাকে ভার্সিটির (আহ্‌ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি) সামনে। এক জ্যাম বাধলে সর্বনিম্ন ২০ থেকে ৩০ মিনিট তো এমনিতেই যায়। তার বেশিও যাইতে পারে। ভার্সিটির সামনে ছাত্রদের বড় বড় বাস দাঁড়িয়ে থাকলে জ্যাম বাঁধে। আমি চেষ্টা করি জ্যামের সময় অন্য পাশ ঘুরে চলতে।’

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের লাভ রোডে শমরিতা হাসপাতাল এবং আহ্‌ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি ও ভূমি অফিসের সামনে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে দিনের বেশির ভাগ সময় যানজট লেগে থাকে। ছবি: নিউজবাংলা

প্রতিষ্ঠানের সামনে বাস রাখার কারণ জানতে কথা হয় আহ্‌ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মাদ মোশারফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যানজট হয় মূলত আমাদের প্রতিষ্ঠানের সামনের জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউটে আসা রোগী অথবা কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং আর আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের পিক-ড্রপের জন্য বিআরটিসির বাস রাখার কারণে। এই যানজটের কারণে আমরাও ভুক্তভোগী হই। আমরা মূলত বিটিআরসির কাছ থেকে বাসভাড়া করেছি ছাত্রছাত্রীদের ড্রপ-পিকের জন্য।

‘আমরা তাদের (বিআরটিসি) বারবার বলেছি, স্টুডেন্ট আনা-নেওয়ার পরপরই তারা যেন এই বাসগুলো সরিয়ে নেন। কিন্তু দেখা যায় বাস ড্রাইভাররা বাস যথাসময়ে সরান না। তারা বলেন,‌ 'অন্যরা রাস্তায় গাড়ি রাখে, তাই আমরাও রাখি। আমরা তাদের বারবার বলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এ জন্য আমরা স্থানীয় থানায়ও বলে রেখেছি, তারা যেন এই বাসগুলো সময়মতো সরাতে বাস ড্রাইভারদের চাপ দেয়।

‘তবে কিছুদিন যাবৎ আমরা দেখছি, বিআরটিসির বাস ড্রাইভাররা ছাত্রছাত্রী নামিয়েই পাশের রাস্তায় বাস রেখে দেয় আবার যাওয়ার সময় ২০ মিনিট আগে ভার্সিটির সামনে এসে উপস্থিত হয়। মূলত আমাদের এই ৭-৮টি রুটের বাস যখন পিক-ড্রপ করে শুধু সেই সময়টায় যানজট হয়। যেটা আগের চেয়ে কম।’

অবৈধ পার্কিং শহরজুড়ে

শুধু তেজগাঁওয়ে নয়, রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় রাস্তার অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। কারওয়ান বাজার, মতিঝিল, মগবাজার, নিউ মার্কেট, মৌচাক, কাকরাইল, পল্টন, সচিবালয়, গুলশান, ধানমন্ডি, বনানীসহ প্রায় সব এলাকার রাস্তাতেই দীর্ঘ সময় অবৈধভাবে গাড়ি পার্ক করে রাখতে দেখা যায়।

কারওয়ান বাজার এলাকার বেশ কিছু রাস্তা সিটি করপোরেশন পার্কিংয়ের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। এ কারণে এই এলাকার সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা তরিকুল ইসলাম নামের চাকরিজীবী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যানজটের কারণে এই বাজারে আসাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এই কারওয়ান বাজারের রাস্তাগুলো অনেক প্রশস্ত। কিন্তু অবৈধ গাড়ি পার্কিং করে রাখায় এই রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে গেছে। অনেক সময় গাড়ি রেখে সেটুকুও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই কারণে এখানে যানজটের সৃষ্টি হয়। ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও কোনো কাজ হয় না।’

কারওয়ান বাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সামনে রাখা আছে বেশ কয়েকটি মিনি ট্রাক। কথা হয় মাসুম রেজা নামের এক ড্রাইভারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাজারে মাল নিয়া আইছি। বিকেলে চইলা যামু। এই সময়টা গাড়িটা কই রাখুম। সবাই রাখতাছে, তাই আমিও রাখছি। পুলিশও তো কিছু কয় না, আপনি জিগাইতেছেন কেন?’

কারওয়ান বাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) উপপরিচালক মোহাম্মাদ নুরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অফিসের সামনে এই গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে আমরাও অফিস থেকে ঠিকমতো বের হতে পারি না। দেখা যায়, আমাদের অফিসের সামনে আমাদের গাড়ি নেই, অথচ কারওয়ান বাজারের সবজির পিকআপে ছেয়ে গেছে। আমরা বলেও তাদের সরাতে পারি না। আর এসব গাড়ির কারণে পুরো কারওয়ান বাজারে জ্যাম সৃষ্টি হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের অফিসের সামনের রাস্তার কিছু জায়গায় ডিএনসিসি থেকে পার্কিংয়ের জন্য অনুমতি নেওয়া আছে। সেখানে আমাদের অফিসের কিছু গাড়ি রাখলেও বেশির ভাগ গাড়ি আমরা আমাদের অফিসের আন্ডারগ্রাউন্ডে রাখি।’

সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অস্থায়ী পার্কিং জোন রয়েছে ৩১টি। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একটি স্থায়ী ও ২২টি অস্থায়ী পার্কিং জোন রয়েছে। অস্থায়ী পার্কিং জোনের বেশির ভাগই করা হয়েছে রাস্তার ওপর।

ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা শহরের যানজটের অন্যতম কারণ যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করেই সামান্য কিছু রাস্তায় পার্কিংয়ের অনুমতি দিয়েছি। কিন্তু দেখা যায়, অধিকাংশ রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। বিশেষ করে হাসপাতাল, স্কুল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এই পার্কিংগুলো বেশি হয়।

‘আমরা এগুলোর বিরুদ্ধে বেশি অ্যাকশনে যেতে পারি না, কারণ আমাদের অত জনবল নেই। এই কাজ তো ট্রাফিক পুলিশের। তারা কঠোর হলেই এই সমস্যার সমাধান হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘সফটওয়্যার কন্ট্রোল্ড স্মার্ট পার্কিংয়ের জন্য ইতোমধ্যেই আমরা গুলশানে পাইলটিং শুরু করেছি। এটা সফলভাবে শেষ হলে আমরা সব জায়গায় এটা প্রয়োগ করব। আশা করি তখন পার্কিং জটিলতা কমে আসবে।’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মদও সেলিম রেজার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, ‘এটা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কাজ। তারাই বলতে পারবে কেন রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা হয়। আমাদের যতটুক কাজ আছে, আমরা সেটা করে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের অঞ্চলের যেসব বড় প্রকল্প হচ্ছে, সেখানে আমরা গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রাখছি। যেমন ওসমানী উদ্যানে বড় পরিসরে পার্কিং জোন তৈরি হবে। এখানে আড়াই হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। শিশু পার্কেও পার্কিং জোন থাকবে। আরো কিছু জায়গায় গাড়ি পার্কিংয়ের পরিকল্পনা চলছে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, ‘অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যে যানজট সৃষ্টি হয়, সেটা আমরাও জানি। কিন্তু যেসব এলাকায় পার্কিংয়ের জায়গা নেই, সেখানকার মানুষ কোথায় গাড়ি পার্কিং করবে? এটা তো একটা সমস্যা। এগুলো বেশি হয় প্রধান সড়কের আশপাশে যেসব শাখা সড়ক আছে, সেখানে। আমরা সব সময় এই অবৈধ পার্কিংকে নিরুৎসাহিত করি। এমনকি আমরা অনেক জায়গায় নিয়মিত জরিমানাও করি। কিন্তু স্থায়ী কোনো কাজ হয় না। আবার আমরা কাঠোর হলে তো দেখা যাবে অনেক অফিসের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন তো একটা প্রভাব পড়বে। আসলে পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের অবকাঠামো তৈরি না করলে এই সমস্যার আপাতত কোনো সমাধান আমি দেখছি না।’

এ বিভাগের আরো খবর