বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সমাবেশে ‘নারায়ে তাকবির’ নতুন নয়, এবার কেন বিব্রত বিএনপি

  •    
  • ১৪ অক্টোবর, ২০২২ ২০:১৩

হুম্মাম কাদের চৌধুরী, তার বাবা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও চাচা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী নিয়মিতই বিএনপির সভা সমাবেশে ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান ব্যবহার করেছে। কখনও বিএনপির পক্ষ থেকে এটি নিয়ে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু গত বুধবার পলো গ্রাউন্ডের সমাবেশে হুম্মাম স্লোগান দেয়ার পরদিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, এটা তাদের স্লোগান নয়, হুম্মামের নিজস্ব বক্তব্য। খসরুর এই বক্তব্যের সমালোচনা করছেন বিএনপি সমর্থকরা।

চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ এবার প্রথমবারের মতো উচ্চারিত হয়নি। তবে প্রথমবারের মতো দলের নেতারা এ নিয়ে বিব্রত হয়েছেন। দলটির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছে, এটি তাদের স্লোগান নয়, এটি স্লোগানদাতার নিজস্ব রাজনীতি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী গত বুধবার চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে বিএনপির সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনবার ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দেন। তিনবারই দলের কর্মী সমর্থকরা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে জবাব দেন।

এই স্লোগানটি বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দলগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করলেও বিএনপির সমাবেশে সেটি সেভাবে শোনা যায়নি। তবে চট্টগ্রামের নানা সমাবেশে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী একাধিকবার এই স্লোগান ব্যবহার করেছেন। এমনকি হুম্মামও একাধিকবার কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে এই স্লোগান রেখেছেন।

সে সময় এ নিয়ে বিএনপির কেউ স্লোগানটিকে অস্বীকার করেনি, যেটি এবার করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ফাইল ছবি

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আসার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এই স্লোগান বিএনপির রাজনীতির অংশ নয়। হুম্মামের বক্তব্যের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততাও নেই।’

আমির খসরুর এই বক্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমে বিএনপির অনুসারীরাই এর সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন, এই স্লোগান অস্বীকার করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

এ বিষয়ে আমির খসরুর সঙ্গে শুক্রবারও যোগাযোগ করেছে নিউজবাংলা। তবে প্রশ্ন শুনে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিএনপির সমাবেশে হুম্মাম তো আগেও এই স্লোগান ব্যবহার করেছেন, তখন তো আপনারা এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। এবার কেন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন- এমন প্রশ্নে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো বক্তব্য দেবো না।’

আপনাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সংক্ষেপে যদি একটু বলতেন- এমন কথা বলার পর বিএনপি নেতা বলেন, ‘না, না, বললাম তো কোনো বক্তব্য দেবো না।’

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাৎ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।

চট্টগ্রাম বিএনপি নেতাদের মধ্যে মতভেদ

বিএনপির সমাবেশে ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ মনে করে, এই স্লোগান দেয়া উচিত হয়নি। অপর পক্ষ মনে করেন, এই স্লোগান ঠিক আছে।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীর ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দেয়ার পক্ষে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মুসলিম হিসেবে এটা আমাদের ইমানি স্লোগান, এখানে অন্যায় কিছু হয়নি। বিএনপির জনজোয়ারে এটা দিয়ে বিএনপিতে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

‘মুসলিম হিসেবে সর্বজনীন অনুষ্ঠানেও আমি আমার ইমানি শক্তি প্রকাশ করতে পারি, এটা নিয়ে অপরাজনীতির সুযোগ নেই।’

চট্টগ্রামের বিভাগীয় সমাবেশে নারায়ে তাকবির স্লোগান দেয়ার মুহূর্তে। ছবি: ভিডিও থেকে নেয়া/নিউজবাংলা

তবে রাউজান ‍উপজেলা বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরীর দাবি হুম্মামের এই স্লোগান দেয়া উচিত হয়নি। এই মতে প্রকাশের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই এই স্লোগানকে ঘিরে দলে বিভেদ তৈরির চেষ্টা চলছে। এই স্লোগানের বিষয়ে দলের বক্তব্যের পক্ষেই আমার অবস্থান। কারণ, আমি দলের বাইরে নই, আর এটা দলীয় স্লোগানও নয়। অর্থাৎ এই স্লোগান ওনার একান্তই ব্যক্তিগত।’

আগে কবে এই স্লোগানের ব্যবহার

২০১৯ সালেরে ২০ জুলাই চট্টগ্রামের কাজির দেউড়িতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য শেষে এই স্লোগান দেন হুম্মামের চাচা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।

সেদিনও তিনি বক্তব্য শেষ করে গত বুধবার হুম্মামের মতোই তিনবার ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দেন। স্লোগানের আগে তিনি নেতাকর্মীদের শিখিয়েও দেন প্রতুত্তরে কী বলতে হবে।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রামের কালামিয়া বাজার এলাকার কেবি কনভেনশন সেন্টারে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাসবাবেশে হুম্মাম কাদের চৌধুরী আবার ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দেন।

৩ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, ‘তোমাদের সামনে এসেছি। একটা জিনিস বলে যেতে চাই, নারায়ে তাকবির, নারায়ে তাকবির, বেগম জিয়া জিন্দাবাদ, তারেক রহমান ভাই জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’

আগে এই স্লোগান ব্যবহার করে দলের ভেতরে বিরোধিতায় না পড়লেও এবার ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে হুম্মাম কী ভাবছেন, সেটি জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। দিনভর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

হুম্মামের দাদা ফজলে কাদের চৌধুরীর দল মুসলিম লীগের স্লোগান ছিল এটি। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীও যখন মুসলিম লীগে ছিলেন, তখন এই স্লোগান ব্যবহার করতেন। বিএনপিতে আসার পরও সেটি ছাড়েননি।

জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিএনপি গঠনের সময় যেসব দলের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে যোগ দেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশই ছিল মুসলিম লীগ, যেটি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিরোধিতা করে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতাও করেছিল।

এ বিভাগের আরো খবর