প্রথমবারের মতো ঢাকা সফরে আসছেন বিশ্বের অন্যতম ধনী দ্বীপরাষ্ট্র ব্রুনাই দারুস সালামের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন তিনি। এ সময় বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে স্বাগত জানাবেন রাষ্ট্রপতি।
শনিবার দুপুর ১২টায় সুলতানকে বহনকারী একটি বিশেষ ভিভিআইপি ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য ও পদস্থ বেসামরিক এবং সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ব্রুনাইয়ের সুলতানকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন।
সুলতানের সফরসঙ্গী হিসেবে রাজকীয় পরিবারের সদস্য, সে দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং ব্রুনাই সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা আসছেন।
বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল বিমানবন্দরে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করবে। সেখান থেকে একটি সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রা সহকারে তাকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নিয়ে যাওয়া হবে।
পরে ব্রুনাইয়ের সুলতান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সুলতান সেখানে একটি গাছের চারা রোপণ এবং দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করবেন।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে জানান, সাভার থেকে সুলতানকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়ে যাওয়া হবে। ঢাকায় সফরকালে সুলতান এই হোটেলেই অবস্থান করবেন।
একইদিন বিকেলে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন হোটেলের সভা কক্ষে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের ক্রিডেনশিয়াল হলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন ব্রুনাইয়ের সুলতান বলকিয়াহ। পরে তিনি বঙ্গভবনের গ্যালারি হলে দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করবেন।
রাষ্ট্রপ্রধান সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে সুলতানের সম্মানে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।
১৬ অক্টোবর সকাল সোয়া ১০টায় সুলতান ওয়াদ্দৌলাহ ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে তিনি সেখানে রক্ষিত দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করবেন।
জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যরা সুলতানকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
সকাল ১১টা ৫ মিনিটে ব্রুনাইয়ের সুলতান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার তেজগাঁও কার্যালয়ের (পিএমও) শিমুল হলে একান্ত বৈঠক করবেন।
পরে পিএমও’র চামেলী হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বঙ্গভবনের মুখপাত্র জানান, সুলতানের তিন দিনের সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অন্যান্য কর্মসূচির সঙ্গে করোবীতে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হবে।
সুলতানের সফরকালে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল, বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগ এবং দুদেশের নাবিকদের সনদ দেয়াসহ পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। সুলতান সেখানে দর্শনার্থী বইতে স্বাক্ষর করবেন।
সুলতান ১৭ অক্টোবর ঢাকা ত্যাগ করবেন। ঢাকা ত্যাগের আগে বিমানবন্দরে রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার প্রদানের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনাইয়ের সুলতান ও তার সফর সঙ্গীদের বিদায় জানাবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন নিউজবাংলাকে জানান, বাংলাদেশে ২০২০ সালে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালন ও মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের সময়ে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে অনেক নেতারা আসতে পারেননি। এখন সেসব নেতাকে বাংলাদেশ সফরে আনার চেষ্টা করেছে ঢাকা। ব্রুনাইয়ের সুলতানও ওই সময় আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘হাসানাল বলকিয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে জনশক্তি রপ্তানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি সংগ্রহের সম্ভাবনা, কৃষি ও মৎস্য খাতে সহযোগিতা এবং হালাল খাদ্য নিয়ে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে।’
ব্রুনাইয়ে বর্তমানে ২৩ হাজার বাংলাদেশি বিভিন্ন খাতে কর্মরত আছেন। বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ অনেক আগে ব্রুনাই থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করেছে। তারপর তা নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এখন দেশটি থেকে জ্বালানি আমদানির বিষয়ে আলোচনা হবে। ব্রুনাইয়ের তেল-গ্যাসসহ জ্বালানির বিপুল রিজার্ভ রয়েছে।
মোমেন বেলেন, ‘সুলতানের সফরে রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করবে বাংলাদেশ। ব্রুনাই আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আসিয়ানের জোরালো ভূমিকা চাইবে। এ সফরে বর্তমান মিয়ানমার পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, সেটা তুলে ধরারও সুযোগ পাবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের এপ্রিলে ব্রুনাই সফর করেন। ব্রুনাইয়ের সুলতানের এটা ফিরতি সফর।
এর আগে ব্রুনাই সুলতানের আমন্ত্রণে ২০১৯ সালের ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি সফর করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সফরে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে আলোচনার পাশাপাশি ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল।