নালী-বানিয়াজুরি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে চলছে খিড়াই নদী। মানিকগঞ্জের ঘিওরের দিয়াইল-গাংডুবি এলাকার মানুষের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সেতু। দেশের উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গেলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এখানে।
পাকা সেতু না থাকায় সাত কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয় কমপক্ষে ২৫ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষকে।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, সেতু নির্মাণের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ঘিওর উপজেলার দিয়াইল ও গাংডুবি এলাকারবাসীর উদ্যোগে খিড়াই নদীর ওপর দীর্ঘ বাঁশের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এই সেতু ব্যবহার করে যাতায়াত করে চাকরিজীবী মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এর ওপর দিয়েই পারাপার করে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান ও অটোবাইক।
মানুষ ও যানবাহনের যাতায়াতের ফলে মাঝে মাঝে ভেঙে গেছে বাঁশের চালি।
নালী ইউনিয়নের গাংডুবি এলাকার ৮৫ বছরের জুরান রায় বলেন, ‘বাপ-দাদার মুখে শুনেছি, তারাও বাঁশের পুল (সেতু) বানাইয়া আসা-যাওয়া করছে। আগে বাপ-দাদার এক বাঁশের পুল দিয়ে আসা-যাওয়া করতো। আমরা এখন বাঁশের চালি দিয়ে আস-যাওয়া করি। যদি বাঁশের বদলে পাকা সেতু হয়, তাইলে সবার ভালো হইব।’
স্থানীয় পরশচন্দ্র শীল জানান, এই বাঁশের সেতুটি দিয়ে নালী, দিয়াইল, গাংডুবি, শোলধারা, কেল্লাই, কাকজোর, বানিয়াজুরি, নিমতা, গালা ও ইন্তাজগঞ্জসহ আশপাশের ২০টি গ্রামের মানুষ আসা-যাওয়া করে। প্রতিদিন ৮-১০ হাজার মানুষ এই সেতু ব্যবহার করে। বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে স্কুল-কলেজের ছেলেসহ সকলের ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাছাড়া আশপাশের রাস্তাও ভালো না।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গুরুদাস বলেন, ‘এখানে সেতু নির্মাণ করা হলে মানুষকে আর কষ্ট করতে হবে না। সেতু না থাকায় আশপাশের মানুষকে ৭ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যেতে হয়। এখানে সেতু নির্মাণ হলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষের সময় ও ভোগান্তি দূর হবে।’
দিয়াইল এলাকার রনি মৃধা বলেন, ‘সারা দেশে সরকারের উন্নয়নের জোয়ার বয়ে চলছে। অথচ আজ পর্যন্ত এখানে কোনো সেতু নির্মাণ হলো না। একটা সেতুর জন্য আমাদের এই এলাকাসহ আশপাশের মানুষ আজ অবহেলিত।’
নালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস মধু মিয়া বলেন, ‘ঘিওর উপজেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াতের সহজ মাধ্যম কাকজুরি ও দিয়াল রাস্তা। কিন্তু মাঝখানে নদী থাকায় যাতায়াতে মানুষের কষ্ট বেশি হয়। এখানে সেতু নির্মাণ করার খুব জরুরি।’
ঘিওর উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাজ্জাকুর রহমান জানান, ৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এ নদীর ওপরে ৯০ মিটার দৈর্ঘের একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের পর ঠিকারদার কাজ শুরু করবে।