বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফেসবুকের কল্যাণে ৩১ বছর পর জালালের দেশে ফেরা

  •    
  • ১৩ অক্টোবর, ২০২২ ২১:১৮

আবদুর রব মিস্ত্রির জানান, ১৯৯১ সালে আট বছর বয়সে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে দেওবান কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতে যায় তার ছেলে। কিছুদিন পর মাদ্রাসা থেকে হারিয়ে যায় সে। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে আর যোগাযোগ ছিল না।

ভারতে পড়তে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফেসবুক পেজের কল্যাণে ৩১ বছর পর ফিরে পেয়েছে বরগুনার বামনার একটি পরিবার। সেই ছেলে তার স্ত্রী সন্তান সমেত দেশে এসে আনন্দে ভাসিয়েছে বাবা-মাকে।

বাবা বলছেন, এখন তার আর কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই। এখন সুখ নিয়ে চোখ বুঁজতে পারবেন।

বামনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বশিরুল আলম জানান, গত বুধবার সকালে বামনার কলাগছিয়া ইউনিয়নের আব্দুর রব মিস্ত্রির বড় ছেলে জালাল আহম্মেদ সপরিবারে ভারতের কর্নাটক প্রদেশ থেকে বাড়িতে এসে পৌঁছেন।

আবদুর রব মিস্ত্রির জানান, ১৯৯১ সালে আট বছর বয়সে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে দেওবান কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতে যায় তার ছেলে। কিছুদিন পর মাদ্রাসা থেকে হারিয়ে যায় সে। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে আর যোগাযোগ ছিল না।

গত বছরের মে মাসে ফেসবুকে ‘বামনা সংবাদ’ নামে একটি ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন জালাল। এরপর তার বাড়ি ফেরার বিষয়টি জানায়।

পেজের মডারেটর গোলাম রেদোয়ান রাব্বি তালুকদার বলেন, ‘আমাদের পেজে জালাল আহম্মেদ নক করেন। তিনি ভালো বাংলা লিখতে না পারার কারণে অনেক কিছুই প্রথমে বুঝতে পারিনি। তবে বাবার নাম ও গ্রামের নাম বুঝেছিলাম। খুঁজতে খুঁজতে দুই দিন পরে তার বাবা-মাকে পেয়ে যাই।’

গত ২৭ মে খোঁজ মেলে পরিবারের সদস্যদের। এরপর হোয়াটস অ্যাপে বাবা-মা ও স্বজনের সঙ্গে ভিডিও কলে জালালকে কথা বলিয়ে দেন। আবদুর রব তখন নিশ্চিত হন, এটিই তার হারিয়ে যাওয়া ছেলে। পরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুধবার জালাল সপরিবারে বাংলাদেশে ফিরে আসে।

জালাল আহমেদ জানান, মাদ্রাসা থেকে চলে গিয়ে উত্তর প্রদেশের একটি এতিমখানায় লেখাপড়া শুরু করেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কোনো বৈধ উপায়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি তার।

পড়ালেখা শেষে রাজ্যে একটি মসজিদে ইমামতি করতে এতিমখানার পক্ষ থেকে পাঠানো হয় তাকে। এরপর সেই রাজ্যের নাগরিকত্ব পান জালাল। বিয়ে করেন সেখানকার এক মুসলিম পরিবারে। বর্তমানে দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তার সংসার।

ফেসবুকে ছেলের ছবি দেখছেন আব্দুর রব মিস্ত্রী

ভারতের নাগরিক হলেও তার শিকড় বাংলাদেশে। কিন্তু বাবা-মা, স্বজন বা কোনো প্রতিবেশীর ফোন নম্বর না থাকায় ৩০ বছর ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলেন।

জালাল বলেন, ‘ভারতে প্রথমে সেখানে অবৈধভাবে থাকায় কোনো বৈধ উপায়ে বাবা-মার খোঁজ-খবর নিতে পারিনি। পরে বৈধতা পেলেও খোঁজ নেয়ার কোনো মাধ্যম পাইনি।

‘পরে ছেলের সুবাদে ফেসবুকে বামনার একটি পেজের সন্ধান পাই। এরপর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। তারাই আমাকে বাবা-মার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়।’

হারানো সন্তান ফিরে পেয়ে আব্দুর রব মিস্ত্রি বলেন, ‘মোর পোলাডারে মুই ফিইর‌্যা পামু জীবনেও বুঝি নাই। পোলার আশা ছাইরাই দিছিলাম। পোলাডা এহন মোর বুকে ফিরা আইছে। মুই আর কিছু চাই না।

‘মোর পোলা পূতের বউ, নাতি নাতনি সব পাইছি। এর চাইতে আর জীবনে পাওয়ার কিছু থাহে না। মুই এহন শান্তিতে মরতে পারমু।’

বামনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ওই বাড়িতে গিয়ে জালাল ও তার বাব আবদুর রবের সঙ্গে কথা বলেছি। ছেলেকে ফিরে পেয়ে পরিবারটি খুব খুশি। জালাল ও তার পরিবারের কাছে ফিরে আসায় খুব আনন্দিত।’

এ বিভাগের আরো খবর