গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ভোট বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা সমন্বিত সিদ্ধান্তে কমিশন নিয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ভোট বন্ধ করায় জনগণের মাঝে যাতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যেই এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে বলে জানান সিইসি।
ভোটগ্রহণে ব্যাপক অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে ভোট শেষের দেড় ঘণ্টা আগেই পুরো সংসদীয় এলাকার ভোট ঢাকা থেকে বন্ধ ঘোষণা করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এর আগে বেলা দেড়টার মধ্যে ১৪৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫১টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- কী করে প্রত্যক্ষ করলাম? আমরা সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করে প্রত্যক্ষ করেছি। খুব নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ ও আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা এখানে আছে। সে বিষয়টি হয়তো অনেকের জানা নেই।
‘আমরা হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা কমিশন নিয়েছে। কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিন্তু এক নয়।’
তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন আপনারা দেখেছেন, আমরাও দেখেছি। এ নিয়ে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা নিয়ে জনগণের মনে বিভ্রান্তি থাকতে পারে। কেউ আনন্দ পেয়েছেন, কেউ ব্যথিত হয়েছেন, কেউ সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাই আমাদের পক্ষ থেকে কিছু ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন।’
সিইসি কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে নিতে পারে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চার-পাঁচজন সদস্য একসঙ্গে বসে যে সিদ্ধান্ত নেই, সেটা সমন্বিত সিদ্ধান্ত। সেটা আরও সঠিক ও প্রাজ্ঞ হওয়ার কথা। সিইসি এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। আমরা নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
লিখিত বক্তব্যে সিইসি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর যেসব নির্বাচন করেছি সবগুলোতে ইভিএম ব্যবহার করে অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রের প্রতিটি ভোট কক্ষে আমরা সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলাম।
‘উদ্দেশ্য ছিল, ইভিএমের বিষয়ে গোপন ভোটকক্ষে অবৈধ লোক প্রবেশ করে বা অবস্থান করে ভোটারকে ব্যালট ইউনিটে ভোট প্রদানের সুযোগ না দিয়ে ভোট দিয়ে দেয়ার যে অভিযোগ রয়েছে তা বন্ধ হোক। এই অপরাধ একেবারেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল। তারই আলোকে এবং গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের গুরুত্বের কারণে এখানেও ইভিএমে ভোটগ্রহণ ও প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) সকাল ৮টায় এখানে যথারীতি ভোট শুরু হয়। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে আমিসহ অন্যান্য কমিশনার, দায়িত্ব পালনকারী সচিবালয়ের কর্মকর্তাগণ ও কারিগরি সহায়তাকারী ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা তিনটি কেন্দ্রে দেখতে পাই ভোট কক্ষে প্রার্থীর পুরুষ এজেন্টগণ বুকে ও পিঠে প্রাথীর মার্কা ইত্যাদি প্রিন্ট করা একই রকম গেঞ্জি পরে আছেন এবং মহিলা এজেন্টগণ একইরকম শাড়ি পরা, যা আচরণ বিধিমালার ১০(ঙ) ভঙ্গের মধ্যে পড়ে।
‘এসব এজেন্ট ছাড়াও অনেক অবৈধ লোকজন ভোটকক্ষে অবস্থান করে ভোটাদেরকে ভোট দিতে প্রভাবিত করছেন। ভোটারদের কন্টোল ইউনিটে আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার পরপরই এজেন্টগণ গোপন ভোটকক্ষে প্রবেশ করে ভোটারকে ভোটদানের সুযোগ না দিয়ে নিজেরাই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ একই কাজ করছেন।
তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রের এসব দেখে কমিশন থেকে ফোন দিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারদেরকে ভোট কক্ষে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ভোট কক্ষে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ তাদেরকে গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। তখন কমিশন থেকে ওই তিনটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
অতঃপর একে একে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৫০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের অবস্থা একই রকম দেখা যায়। ইতোমধ্যে রিটার্নিং অফিসার একটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেন।
‘আমি এবং বেগম রাশেদা সুলতানা রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। অন্য কেন্দ্রগুলোতেও সিসিটিভি দেখার সময় পেলে দেখা যেত যে ওইসব কেন্দ্রেও একই অবস্থা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কমিশন মনে করে যে এ ধরনের একটি আইনবহির্ভূত ভোট প্রদান-গ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেলা আড়াইটায় গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘অনিয়মগুলো তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর গাইবান্ধা-৫ আসনের পরবর্তী নির্বাচন বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’