গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তার মতে এই সিদ্ধান্তে জনগণ হতবাক হয়েছে। তবে তিনি এও মনে করেন, এই ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। আর ভোট করতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকার নেই।
গাইবান্ধায় ইভিএমে ভোটারের পরিচয় শনাক্তের পর গোপন কক্ষে উপস্থিত থেকে ভোটারের ইচ্ছার বাইরে একটি প্রতীকে ভোট নেয়ার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশন সেখানে ভোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরদিন বৃহস্পতিবার মন্ত্রী সচিবালয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ অবশ্য এই বিষয়টি জানিয়ে দেন, তার এই বক্তব্য মন্ত্রী বা আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে নিজের অভিব্যক্তি এটি।
তিনি বলেন, ‘আমি দল হিসেবে নয়, মন্ত্রী হিসেবেও নয়, একজন ব্যক্তি হিসেবে কথা বলছি। প্রথমত. নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয়েছে যে, নির্বাচনে সব সময় নির্বাচন কমিশনের অধীনেই হয়। সরকারের সেখানে ভূমিকা নেই। সরকার শুধু ফেসিলেটরের ভূমিকা পালন করে। নির্বাচন কমিশনই সর্বেসর্বা, তাদের সিদ্ধান্তই সবার উপরে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এটিই প্রমাণিত হয়েছে, বিএনপিসহ তারা যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে এর কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণার প্রায় এক যুগ পরও এই ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধের অবসান হয়নি। যদিও এক দশক আগেই জাতীয় সংসদ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আবার আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে কর্মসূচি বাড়িয়েছে বিএনপি
কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় অভিযোগ তুলে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি এটি প্রতিহত করতে সহিংস আন্দোলনে যায় বিএনপি তার জোট। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া এই জোট পরে ভোটে আসে।
কিন্তু সেই নির্বাচনে আগের রাতেই আওয়ামী লীগের নৌকার পক্ষে সিল মারার অভিযোগ এনে বিএনপি আবার তত্ত্বাবধায় সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে। এই দাবিতে সব দলকে একসঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণাও এসেছে। সেই ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের আগের বক্তব্যে ফিরে গিয়ে তারা বলছে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।
তথ্যমন্ত্রী গাইবান্ধার নির্বাচন নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের পক্ষে নয়। তিনি বলেন, ‘সাধারণ জনগণ, সেখানকার ভোটার এবং গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন টক শোতে আমি যেটা দেখেছি, সেখান থেকে মনে হচ্ছে, সাধারণ জনগণ তাদের এ সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছে। কারণ, নির্বাচনী এলাকার কোনো জায়গায় কোনো ধরনের গন্ডগোল হয়নি, কোনো অভিযোগ নাই। এছাড়া কোনো পোলিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসারেরও কোনো অভিযোগ ছিল না। বিন্দুমাত্র সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।’
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয়ে বক্তব্য রাখছেন তথ্যমন্ত্র্য হাছান মাহমুদ
হাছান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন পাঁচ শ কিলোমিটার দুরে বসে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন সে ক্যামেরার রেজ্যুলেশন, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি কেমন ছিল, সেটি একটি বড় প্রশ্নের ব্যাপার। সেটি একটি দুর্গম এলাকা। এখান থেকে ফুটেজ দেখে.. সেটি আসলে কতটুকু স্বচ্ছ বা সঠিক ফুটেজ দিচ্ছিলো দ্যাটস অ্যা বিগ কোশ্চেন।’
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এই আসনের উপনির্বাচনটির দিকে দৃষ্টি ছিল এই কারণে যে, গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রথম কোনো সংসদীয় আসনে ভোটের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন।
বুধবার সকাল থেকে গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আসতে থাকে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোটারের পরিচয় শনাক্তের পর গোপন কক্ষে থাকা ব্যক্তি নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ আসতে থাকে। নির্বাচন কমিশন একাধিকবার এই ব্যক্তিদের ‘ডাকাত’ উল্লেখ করে বলেছে, ডাকাত ঠেকানোই তাদের চ্যালেঞ্জ।
তবে এই ডাকাত ঠেকানো যায়নি। ১৪৫টি কেন্দ্রে স্থাপন করা এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ ঢাকায় বসেই পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন। এরপর একে একে ৫১টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়।
এরপর সিইসি বলেন, নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পরে বেলা আড়াইটার দিকে ভোট বাতিলের ঘোষণা আসে। সেখানে নতুন করে ভোটের আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে প্রিজাইডিং অফিসারের লিখিত রিপোর্ট আছে ৯৮টা কেন্দ্রের, যে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে কোনো গন্ডগোল হয়নি এবং রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশে ভোট বন্ধ করেছে।
‘পাঁচ শ কিলোমিটার দুরে বসে সিসিটিভি দেখে যখন ভোট বন্ধ করা হলো, তখন মানুষ শুধু হতবাকই হয়নি, মানুষ বলছে এর প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত প্রচণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।’
হাছান বলেন, ‘এটা আমি বলছি না, জনগণ বলছে, বোদ্ধাজন বলছেন। সেখানে আমাদের প্রার্থী এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
‘আমাদের প্রার্থী যেটা বলেছে সেই ৫১ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হতে পারত। বাকিগুলো কেন বাতিল হলো? এ প্রশ্ন কি অযৌক্তিক?’