শ্রেণিকক্ষে দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বুধবার সন্ধ্যায় থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয় ভুক্তভোগী শিশুদের পরিবারের পক্ষ থেকে।
বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁ সদর উপজেলার চকপ্রাণ উচ্চ বিদ্যালয়ে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চকপ্রাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছিলেন। এ সময় পড়া জিজ্ঞেস করলে শিক্ষার্থী মোছা. রিসিতা আক্তার এবং মোছা. মারিয়া আক্তার আস্তে জবাব দিলে রফিকুল ইসলাম উত্তেজিত হয়ে তাদের গালিগালাজ করে পিঠে কিলঘুষি মারেন।
এতে ওই দুই শিক্ষার্থীই অজ্ঞান হয়ে পড়লে প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত শিক্ষকসহ কয়েকজন তাদের উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।
এদের মধ্যে রিসিতার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাত ৮টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রিসিতার মামা জালাল হোসেন বলেন, ‘আমার বোন-দুলাভাই ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। আমার বাসায় থেকেই পড়াশোনা করে ভাগনি। জোড়ে পড়া দিতে পারেনি বলে শিক্ষক এভাবে তো মারধর করতে পারে না। এটা খুবই অন্যায়।’
শিক্ষার্থী মারিয়ার বাবা শহরের আরজী-নওগাঁ মহল্লার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সে খুব ভয় পেয়েছে। এত অল্প বয়সে তাকে মারধর করেছে। এ কেমন শিক্ষক! তার মাঝে কি মায়া-মমতা নাই?’
অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আস্তে পড়া দেয়ার জন্য নয়, সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ের পড়া নেয়ার সময় কিছুক্ষণের জন্য শ্রেণিকক্ষের বাইরে গিয়েছিলাম। এসে দেখি হইচই। এ জন্য ৪ শিক্ষার্থীকে শাসন হিসেবে হালকা চড়-থাপ্পড় দিয়েছি। এর কিছুক্ষণ পর তারা অজ্ঞান হয়ে যায়। সাথে সাথে আমরা হাসপাতালে নিয়ে তাদের ভর্তি করি।’
গায়ে হাত তোলার নিয়ম নেই তবুও কেন এমনটা করলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাচ্চাদের একটু-আধটু শাসন তো করতেই হয়।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি অফিসে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত ছিলাম। দুপুর আড়াইটার দিকে জানতে পারি, রিসিতা ও মারিয়া অজ্ঞান হয়ে গেছে। পরে আমরা তাদের উদ্ধার হাসপাতালে ভর্তি করি।’
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘শিশুরা শ্রেণিকক্ষে মনে হয় হইচই করেছিল। এ জন্যই একটু শাসন করেছেন শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। তারপরও আমরা বিষয়টির সার্বিক তদন্ত করবো।’
শিশুদের অবস্থার বর্ণনা দিয়ে নওগাঁ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ফারহানা শারমিন বলেন, ‘শাসনের কারণে দুজনই মারাত্মক ভয় পেয়েছে। এদের মধ্যে মারিয়াকে সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। আর রিসিতাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
নওগাঁ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি অবগত হয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দিয়েছি যেন, অভিযুক্ত শিক্ষক কিছুদিন স্কুলে ক্লাস না নেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
অভিযোগের বিষয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি (অপারেশন) আব্দুল গফুর বলেন, ‘আমরা বিয়টি তদন্ত করে দেখছি।’