অনিয়মের অভিযোগে ভোট বাতিল করে দেয়ায় নির্বাচন কমিশনদে ধন্যবাদ জানিয়েছে সেই ভোটে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের সেখানে আবার তফসিল ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন।
ভোটারের গোপন কক্ষে অবস্থান করে একটি বিশেষ মার্কায় ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভোট বাতিলের বিরল এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠান জাপা চেয়ারম্যান।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বীর মৃত্যুতে ফাঁকা হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জাতীয় পার্টি।
বুধবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আসতে থাকে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোটারের পরিচয় শনাক্তের পর গোপন কক্ষে থাকা ব্যক্তি নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ আসতে থাকে। নির্বাচন কমিশন একাধিকবার এই ব্যক্তিদের ‘ডাকাত’ উল্লেখ করে বলেছে, ডাকাত ঠেকানোই তাদের চ্যালেঞ্জ।
তবে এই ডাকাত ঠেকানো যায়নি। ১৪৫টি কেন্দ্রে স্থাপন করা এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ ঢাকায় বসেই পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন। এরপর একে একে ৫১টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়।
এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী মাহমুদুল হাসান রিপন ছাড়া বাকি চারজন জাতীয় পার্টির এ এইচ এম গোলাম শহীদ রনজু, কুলা প্রতীকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম, আপেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল) ও ট্রাক প্রতীকে আরেক নির্দলীয় প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
ভোট চলার সময় অনিয়মের অভিযোগ এনে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থী একযোগে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন দুপুরের আগে আগে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটের পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এর ঘণ্টা দুয়েক পরে তিনি ভোট বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এরপর গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে জি এম কাদের বলেন, ‘সকাল থেকেই প্রায় শতভাগ কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টদের জোর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা। তারা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিয়েছে, আবার ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষে সন্ত্রাসীরা অবস্থান করে ভোটারের ইচ্ছার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এ সব কারণে, ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করেছে। এজন্য আমরা জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
নির্বাচন কমিশন ভোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপার নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে দেখা করে নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় ভোট দেয়ার দাবি জানান।
গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়া নির্বাচন কমিশন বারবার বলছিল, তারা ভোটে অনিয়ম রুখতে বদ্ধপরিকর। অনিয়ম হলে ভোট বন্ধ করে দেয়া হবে, এই ঘোষণা আগেই ছিল। বর্তমান কমিশনের অধীনে প্রথম ভোট হয় গত ১৫ জুন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদে সেই ভোটের আগে আগে বেশ কিছু এলাকায় নির্বাচন স্থগিত করা হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা তাদের সমর্থকদের আচরণে। তবে ভোট চলার দিন নির্বাচন স্থগিত করার ঘটনা এই প্রথম ঘটল।
সিদ্ধান্ত জানিয়ে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কাছে মনে হয়েছে, ভোটগ্রহণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। একটি পক্ষ বা একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোট প্রভাবিত করতে পারছেন। আমাদের দৃষ্টিতে মনে হয়েছে-সুষ্ঠু নির্বাচন গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় আমরা ৫১টি ভোটকেন্দ্র বাতিল হয়ে যাওয়ার পর আইন কানুন পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিলাম।’