মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বেথুলিয়া গ্রামে সোমবার সন্ধ্যায় খুন হওয়া ৪ বছরের শিশু হিরা খাতুনের খুনের ঘটনায় ১৩ বছরের চাচাত বোন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আদালতে। নিহত হিরার মায়ের ওপর প্রতিশোধ নিতেই এই খুন করেছেন বলে দাবি করেন ওই কিশোরী।
মঙ্গলবার রাতে এ খবর নিশ্চিত করেছে মহম্মদপুর থানা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে চাচি অপপ্রচার করেছিলেন বলে দাবি করেন কিশোরী। সেই অপপ্রচারের প্রতিশোধ নিতেই চাচাত বোনকে খুন করেন বলে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান তিনি।
এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় শিশু হিরা নিহতের ঘটনায় বাবা হিরো মোল্লা দাবি করেছিলেন তার আপন ভাইয়েরাই এর সঙ্গে জড়িত।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর হিরার চাচা ফারুক হোসেন, তার কিশোরী কন্যা ও আরেক চাচাকে আটক করে মহম্মদপুর থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জবানবন্দিতে ওই কিশোরী শিশু হিরাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে আদালত তাকে শিশু সংশোধানাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
মাগুরা পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, খুন হওয়া হিরার বাবা হিরো মোল্লার সঙ্গে তার চাচাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ জন্য খুনের পরই শিশুটির বাবা-মা তার চাচাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন।
এদিকে, আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করে কিশোরী জানান, একটি ছেলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আর ওই ছেলের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করতেন বাবার মোবাইল থেকে। কিন্তু বাবা টের পেয়ে গেলে চাচি বন্যা খাতুনের মোবাইল থেকে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যান।
কিন্তু সম্প্রতি মোবাইলে কথা বলা নিয়ে চাচির সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় কিশোরীর। তিনি দাবি করেন, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে চাচি পাড়া প্রতিবেশীর কাছে খারাপ কথা বলে বেড়াতেন। এসব অপপ্রচার তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই চাচিকে চরম শিক্ষা দেয়ার সুযোগ খুঁজছিলেন।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল হাসান (প্রশাসন) জানান, সোমবার বিকেলে ছোট মেয়ে হিরাকে খাবার খেতে দিয়ে বড় মেয়েকে আশেপাশে খুঁজতে যান মা বন্যা খাতুন। এই সুযোগে ঘরে প্রবশে করে ভাত খাওয়া অবস্থায় হীরাকে একটি কাঠের টুকরো দিয়ে সজোরে মাথায় আঘাত করেন কিশোরী। এতে হীরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে একটি ব্লেড দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে পোচ দিয়ে তিনি মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
পুলিশ কর্মকতা বলেন, ‘এরপর ওই কিশোরী অন্য চাচির বাড়িতে গিয়ে গোসল করে। এমনকি সে নিজেই স্থানীয় ইউপি সদস্য ও পুলিশকে মেয়েটির মৃত্যুর খবর দেয়। হত্যাকাণ্ডে তার ব্যবহৃত কাঠের টুকরো ও ব্লেড জব্দ করেছে পুলিশ।’
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে নিহত হীরার বাবা হিরু মিয়া অজ্ঞাত আসামিদের নামে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সন্দেহভাজন তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়।
আদালত দুজনকে কারাগারে ও কিশোরীকে সংশোধোনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।