সঠিকভাবে হোমওয়ার্ক না করায় তৃতীয় শ্রেণির পাঁচ শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত পানি পান করিয়ে শাস্তি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
ঘটনার পর এক শিশু বাসায় গিয়ে বমি করলে বিষয়টি অভিভাবকরা জানতে পারেন। পরে তারা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে বুধবার অধ্যক্ষ খোন্দকার অলিউল ইসলাম নিজে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে শুরু করেন।
তিনি নিজেই নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার। পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বুধবার স্কুলে গেলেও বাকি দুই শিক্ষার্থী যায়নি।
শিশুদের অতিরিক্ত পানি পান করানোর বিষয়টিকে ‘ফান’ বলছেন অভিযুক্ত ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম মামুন।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মাহামুদুন নবী সাইমন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার সন্তান এখন সুস্থ থাকলেও, তাকেও মঙ্গলবার ইংরেজি ক্লাসের হোমওয়ার্ক না করায় মনোয়ারুল ইসলাম মামুন স্যার অতিরিক্ত পানি পান করতে বাধ্য করেন। নির্ধারিত পটে নির্দিষ্ট পরিমাণের পানি দিয়ে দেই, কিন্তু আমার ছেলেসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে একবারেই তার থেকে বেশি পানি পান করতে হয়েছে।’
আরেক অভিভাবক শাহানাজ পারভীন বলেন, ‘অতিরিক্ত পানি পান করতে গিয়ে আমার সন্তান এমনভাবেই অসুস্থ হয়েছে, ফলে সে বুধবার বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। তবে বিষয়টি জানার পর বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সকালে আমার ছেলেকে দেখতে বাসায় এসেছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভয়ে আমার ছেলে বাসায় এসে বিষয়টি বলেওনি। বুধবার সকালে অন্য এক শিক্ষার্থীর বাবা যখন বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধানের কাছে অভিযোগ দিতে যান, তখনই বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। এরপর খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পাড়ি, বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে এ ধরনের শাস্তি দিয়েছেন মামুন স্যার।’
স্কুলের অধ্যক্ষ খোন্দকার অলিউল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এ বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসক মহোদয়। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তাকে অবগত করেছি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘তবে ওই পাঁচ শিক্ষার্থীর তিনজন আজ ক্লাসে এসেছে। আর বাকি যে দুজন বিদ্যালয়ে আসেনি তাদের বাড়িতে ইতোমধ্যে আমি খোঁজ নিতে এসেছি। একজন শিক্ষার্থীর বাড়ি হয়ে অন্যজনের বাড়িতে আমি এসেছি। তারা উভয়ই সুস্থ আছে।’
এদিকে শিশুদের অতিরিক্ত পানি পান করানোর বিষয়টিকে ‘ফান’ বলছেন অভিযুক্ত ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম মামুন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওইভাবে কোনো শাস্তি দেয়া বা চাপ দিয়ে পানি পান করানোর ঘটনা ঘটেনি। যারা হোমওয়ার্ক আনেনি, তাদের সঙ্গে ফান করে পানি পান করার জন্য বলা হয়েছিল। তাও আবার তাদের নিজেদের পট থেকে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বেশি পানি পান করে ফেলবে তাও বুঝতে পারিনি।’
ফান করে অতিরিক্ত পানি পান করানোটা কতটা যৌক্তিক ছিল, জানতে চাইলে সদোত্তর তিনি পারেননি তিনি। বলেন, ‘যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বিষয়টি সেরকম নয়। আসলে বিষয়টি শাস্তি দেয়ার জন্য নয়, বাচ্চাদের শাস্তি আমি কখনও দেই না, আমি ওদের সঙ্গে ফান করি।’