বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই চাম্বল ইউনিয়নে ‘গোপন কক্ষে ডাকাতই’

  •    
  • ১২ অক্টোবর, ২০২২ ১৪:৫৮

গত ১৫ জুনের ভোটকে সামনে রেখে নির্বাচনি প্রচারের সময় নানা বেফাঁস মন্তব্য করে সমালোচিত হন মজিবুল হক চৌধুরী। তিনি স্পষ্টতই বলেন, গোপন কক্ষে তার লোক থাকবে। ফলে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ভোট নৌকা মার্কাতেই পড়বে। এরপর ভোট স্থগিতের পাশাপাশি মজিবুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

গোপন কক্ষে লোক রেখে ইভিএমে নিজের পক্ষে ভোট নেয়ার যে বক্তব্যের কারণে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের ভোট স্থগিত হয়েছিল, প্রায় তিন মাস পর ভোটে সেই অনিয়মই দেখা গেল।

অভিযোগ উঠেছে, আঙ্গুলের ছাপে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ভোট দিতে পারেননি অনেকেই। গোপন কক্ষে অবস্থান করে অন্য কেউ ভোটটি দিয়ে দিয়েছে।

গত ১৫ জুন এই ইউনিয়নে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গোপন কক্ষে লোক রেখে নিজের পক্ষে ভোট নিয়ে নেয়ার কথা বলে মামলায় জড়ান ওই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী। পরে সেখানে ভোট স্থগিত করে দেয় নির্বাচন কমিশন।

গত ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন জানায়, এখানে ভোট হবে ১২ অক্টোবর।

মামলার আসামি হলেও মজিবুলের ভোটে দাঁড়ানো ঠেকানো যায়নি। তার প্রার্থিতা নিয়ে শঙ্কায় স্ত্রীকেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন তিনি। তবে মাঠে ছিলেন না।

এ বিষয়ে মজিবুলের বক্তব্য, ‘আমার কর্মীদের রান্না করে খাওয়ান ওনি (স্ত্রী)। ভাই নাকি ভাবির জনপ্রিয়তা বেশি তা যাচাই করার জন্য সে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু ও সুন্দর হচ্ছে জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’

মঙ্গলবার সকাল আটটায় ইউনিয়নের ১০টি কেন্দ্রে ভোট শুরু হয়।

এসব কেন্দ্রের মধ্যে চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬নং মহিলা বুথে গিয়ে দেখা যায়, ইভিএম টিপে দিতে সত্যিই লোক রেখেছেন মজিবুল।

সেখানে অবস্থান করছিলেন মিজানুর রহমান। তাকে ভোটারের হয়ে ইভিএমের বাটন চেপে দিতে দেখা গেছে। তিনি মজিবুলের এজেন্ট।

ওই কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন আবু বক্কর ছিদ্দিক। বুথের সামনে দাঁড়িয়ে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি গুজব, এই বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি।’

এরপর গোপন কক্ষে ইভিএম চেপে দেয়ার ভিডিও দেখালে তিনি সত্যতা স্বীকার করেন। তবে কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি।

অথচ ভোটের আগে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা বলেছিল প্রশাসন। একজন জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও একজন সহকারী পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে মাঠে ছিল র‌্যাব ও ও পুলিশের একাধিক টিম।

রিটার্নিং কর্মকর্তা রকর চাকমাও অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, ‘ইভিএম চেপে দিতে আলাদা যে লোক রাখার কথা এক প্রার্থী বলেছিলেন, তা কোনোভাবেই হতে দেয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের বেশ কয়েকটা টিম মাঠে আছে, সকাল থেকে সুষ্ঠুভাবেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে। পুরো উপজেলায় একটিমাত্র কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হওয়ায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন রয়েছে।’

২৫ হাজার ৫৯০ জন ভোটারের এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী চারজন। মুজিবুল ও তার স্ত্রী ছাড়াও আছেন ফজল কাদের চৌধুরী (আনারস প্রতীক), এরশাদুর রহমান (মোটর সাইকেল)।

সংরক্ষিত সদস্য পদে ৯ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৪৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই ইউনিয়নে।

গত ১৫ জুনের ভোটকে সামনে রেখে নির্বাচনি প্রচারের সময় নানা বেফাঁস মন্তব্য করে সমালোচিত হন মজিবুল হক চৌধুরী। তিনি স্পষ্টতই বলেন, গোপন কক্ষে তার লোক থাকবে। ফলে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ভোট নৌকা মার্কাতেই পড়বে।

এরপর ৫ জুন চাম্বল ইউনিয়নে নির্বাচন স্থগিত করার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি মজিবুলের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ আসে।

সে সময় একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, গোপন কক্ষে লোক রেখে কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট নিয়ে যাওয়ার যে সমস্যা, সেটিই ইভিএমের প্রধান চ্যালেঞ্জ। কমিশনের পক্ষ থেকে একাধিকবার নেই লোকদেরকে ‘গোপন কক্ষের ডাকাত’ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই ডাকাত ঠেকানোই তাদের চ্যালেঞ্জ।

সেই রাতেই বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল আলম বাঁশখালী থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় জামিনে আছেন মজিবুল।

একইদিন চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নে সদস্য পদে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এই ইউনিয়নেও নবম ধাপে নির্বাচনে ১৫ জুন ভোটগ্রহণের কথা ছিল। সেখানেও সরকারদলীয় প্রার্থীর আচরণে স্থগিত হয়ে যায় ভোট।

এ বিভাগের আরো খবর