জনগণের জোয়ার যেখানে নামে সেখানে কোনো শক্তিই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
চট্টগ্রাম নগরে নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ডে বুধবার বিকেলে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে আমির খসরু বলেন, ‘আমরা কোনো ফাঁদে পা দেব না। অনেকে এদিক-সেদিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে। আমাদের শক্তি ক্ষয় করার জন্য অনেক কিছু করবে, অনেক কিছু বলবে, অনেক গুজব ছড়াবে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে খসরু বলেন, ‘ওরা আমাদের ডাইভার্ট করতে চাচ্ছে। গুজবে কান দেবেন না, ধৈর্য্য ধরবেন। পূর্ণ মাত্রায় ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমরা আমাদের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাব। জনগণের জোয়ার যেখানে নামে সেখানে কোনো শক্তিই বাধা দিতে পারে না।’
বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। গণসমাবেশ সফল করতে সবাই যার যার এলাকায় মাঠে আছে। জনগণের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি, মানুষের মধ্যে যে আশা জেগেছে, সরকারের প্রতি যে ক্ষোভ জেগেছে, সেটা পূরণ করার জন্য সমাবেশস্থল হিসেবে আমরা চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মাঠ পলোগ্রাউন্ড বেছে নিয়েছি।
‘এর আগে আমরা পলোগ্রাউন্ডে সভা করেছি। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে সেটি বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় জনসভা হয়েছিল। আজ আমাদের নেত্রী আসবেন না। কিন্তু মানুষ সংগ্রামে নেমেছে, সেটার প্রতিফলন পলোগ্রাউন্ডে দেখা যাবে। সারাদেশের মানুষ পলোগ্রাউন্ডের দিকে তাকিয়ে আছে।’
আমির খসরু বলেন, ‘দেশ-বিদেশে প্রমাণ হয়েছে আমরা খুবই সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছি। এর একটাই কারণ, জনগণের ওপর আস্থা রেখে বিএনপি রাজনীতি করে। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। যেখানে লাখো মানুষ রাস্তায় নামে সেখানে তারা লাঠির চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
‘আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে জনগণ জেগে উঠেছে, জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। জনগণ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা আর রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করতে পারছে না। এখন তাদের মধ্যে বিএনপির সমাবেশগুলোকে বাধাগ্রস্ত করার চিন্তা-ভাবনা কাজ করছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বাংলাদেশে আইন আছে, সংবিধান আছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বাহিনীর, কোনো দলের নয়। আমরা আশা করব, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, তারা তাদের দায়িত্বটা পালন করবে।
‘গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষা করা হচ্ছে প্রশাসনের দায়িত্ব। তারা সেই দায়িত্বটা পালন করবে সেটা জাতি আশা করে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। আমরা তো এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। নির্বাচন হতে হবে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই নির্বাচন কমিশন না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত অবৈধ সরকার, অবৈধ নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার যদি খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়ে দিতে পারে, তাহলে প্রশ্ন জাগে- বাংলাদেশে কি বিচার বিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে? তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তারা বিচার বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য যারা দেন তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বজ্ঞান আছে বলে আমি মনে করি না।’
কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীমের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনর রশীদ, সহ-গ্রামসরকার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান ইয়াহিয়া, কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ প্রমুখ।