বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতোই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। বলেছেন, দেশে বিদ্যুতের যে লোডশেডিং হচ্ছে, দেউলিয়া হওয়ার আগে শ্রীলঙ্কার শুরুও সেভাবেই হয়েছিল।
মঙ্গলবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে দলে যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী ও বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (বিএইচআরসি) এর নির্বাহী সম্পাদক ও এফবিসিসিআই এর সদস্য মির্জা শাহাদাৎ হোসেন এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (বিএইচআরসি) এর সাধারণ সম্পাদক (আন্তর্জাতিক বিশেষ প্রতিনিধি) গোলাম কিবরিয়া মোল্লা জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হওয়ার আগে সে দেশে লোডশেডিং ছিল, ডলারের দাম বেড়েছিল, জ্বালানি তেল কিনতে পারেনি, আবার নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছিল অস্বাভাবিক হারে।
‘ঠিক একই চিত্র বাংলাদেশে, এখানেও ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমছে, ডলারের অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না সরকার। বিদ্যুতের অভাবে শিল্প কলকারখানা চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না, উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
‘কাজ হারিয়ে অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছে। টাকার দাম কমে যাওয়ার কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। আবার শ্রীলঙ্কাকার মতোই মেগা প্রকল্পে লক্ষ-কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। একই সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।’
জি এম কাদের বলেন, ‘৪ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষ অসহনীয় কষ্ট ভোগ করছে। ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের স্থলে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুতি আছে। কিন্তু টাকার অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না সরকার।
‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সেপ্টেম্বর থেকে স্বাভাবিক হবে, এখন তারা বলছেন নভেম্বরে স্বাভাবিক হবে। কেউ জানে না কখন থেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। তাই দেশের মানুষ সরকারের কথায় আস্থা রাখতে পারছে না।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের এমন অর্থনৈতিক বাস্তবতায় মানুষ সীমাহীন কষ্টে আছেন। সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করেছে। ১০ টাকা দামে চাল খাওয়াবে ঘোষণা দিয়েছিল, এখন চালের কেজি ৭০ টাকা। এমন দুঃসহ অবস্থা থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়।’
নির্বাচনে হুমকি ধমকির অভিযোগ
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ করেন জাতীয় পার্টি জি এম কাদের।
বলেন, ‘কাল ভোট। অথচ সেখানে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা হামলা ও মিথ্যা মামলার কারণে ঘরে থাকতে পারছে না। সরকার সমর্থকরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড করে জাতীয় পার্টি নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যে মামলা দিচ্ছে। হাজার-হাজার বহিরাগত সন্ত্রাসী ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। আবার প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসাররা সরকারি দলের আনুকূল্য পেতে ব্যস্ত হয়ে আছেন।
‘আসলে, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেশের মানুষ এখন আর নির্বাচনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যারা ভোট করতে চায় তারাও জানে নির্বাচন করতে জনগণের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয় না। নির্বাচন করতে ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয়। তাই রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলো জনসাধারণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এ কারণেই সাধারণ মানুষও ভোটের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।’
জেলা পরিষদ নির্বাচনেও হুমকি ধমকি চলছে বলে অভিযোগ জি এম কাদেরের। বলেন, নেত্রকোণায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জাতীয় পার্টি নেতা আসমা আশরাফের উপর হামলা করেছে সরকার সমর্থকরা। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।
‘আবার পিরোজপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে সহায়তা করার কারণে তুশখালী ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে হয়নানিমূলক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
‘কিছু দিন আগে এমন একটি মামলায় হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন সফিকুল ইসলাম। পথে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে তার একটি পা বিচ্ছিন্ন করেছে সরকার সমর্থকরা। সে এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আনিস উল ইসলাম মণ্ডল, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহইয়া চৌধুরী, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদাসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।