চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সেজে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জেলের ভয় দেখিয়ে ২ ব্যবসায়ীর অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রামের রৌমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে।
গত ৫ অক্টোবর উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে ‘ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ নামে এক দোকানে এভাবে প্রতারণা করে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন আব্দুল হাই।
পরে তিনি যান শহরের থানা মোড়ে। সেখানে ‘বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একই কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় জনগণের হাতে আটক হন।
ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক সুজন মিয়া বলেন, ‘ঘটনার দিন আব্দুল হাই একাই এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জেল দেয়ার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে উপায় না পেয়ে ৩০ হাজার টাকা তাকে দেই।’
বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক মিন্টু মিয়া জানান, সেদিন রাত ৮টার দিকে তার অনুপস্থিতিতেই দোকানে গিয়ে হাজির জন আব্দুল হাই। এ সময় দোকান অপরিষ্কার ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ত্রুটি রয়েছে দাবি করে কর্মচারীদের দোকান বন্ধ করতে বাধ্য করেন তিনি।
কিন্তু এ ঘটনার কিছুদিন আগে বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকেই ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন আব্দুল হাই। তাই কর্মচারীরা ফোন করে মিন্টু মিয়াকে দোকান বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি জানালে তিনি আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবাদ করেন এবং তাকে কয়েকদিন আগেই একটি বিকাশ নম্বরে ৩৫ হাজার টাকা দেয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন।
এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দেন-দরবার শুরু হলে কিছুক্ষণ আগে ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে ৩০ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টিও সামনে চলে আসে। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মানুষদের বিষটিতে সন্দেহ হলে আব্দুল হাইকে জেরা করেন এবং প্রতারণা বুঝতে পেরে তাকে আটক করেন।
এ অবস্থায় পুলিশি ঝামেলা এড়াতে প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন আব্দুল হাই। সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড সদস্য রবিউল করিম এবং ২ নং ওয়ার্ড সদস্য রবিউল ইসলাম রানার জিম্মায় পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
পরের দিনই ঘটনার কয়েকদিন আগে বিকাশে নেয়া ৩৫ হাজার টাকা বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক মিন্টু মিয়াকে ফেরত দেন আব্দুল হাই। তবে ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক দাবি করেছেন, তার কাছ থেকে নেয়া ৩০ হাজার টাকা আব্দুল হাই এখনও ফেরত দেননি।
এদিকে, এ ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ওই অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
জনতার হাতে আটক হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর আব্দুল হাই বলেন, ‘চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ফোন পেয়েই ওই দুই দোকানে যাই। এ সময় লোকজন জড়ো হয়ে আমাকে আটক করে। পরে চাপের মুখ তাদের টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেই।’
এ বিষয়ে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূবন আখতার বলেন, ‘বিষয়টি জেনে বিস্তারিত বলতে পারবো।’