বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমার বাড়িতেও রাত ২টার পর বিদ্যুৎ ছিল না: প্রতিমন্ত্রী

  •    
  • ১১ অক্টোবর, ২০২২ ১৮:১৪

‘আমরা তো ভালোই ছিলাম। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে তো আমাদের শতভাগ বিদ্যুতায়ন করে ফেলেছি। মানে শতভাগ বিদ্যুৎ দেয়ার ক্যাপাসিটি আমরা অর্জন করেছি। কে জানত এ ধরনের যুদ্ধ হবে?’

পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর থেকে গভীর রাতে লোডশেডিংয়ের যে ভোগান্তি দেখা দিয়েছে, তার শিকার খোদ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, গত রাত দুইটার পর তার বাসাতেও বিদ্যুৎ ছিল না। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ধৈর্য ধরার বিকল্প নেই।

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধজনিত কারণে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী জানান, বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে রাখার যে সিদ্ধান্ত সেটি সক্ষমতার ঘাটতির জন্য নয়। স্পট মার্কেট গ্যাস আমদানি করতে না পারায় এই ঘটনাটি ঘটেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা তো ভালোই ছিলাম। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে তো আমাদের শতভাগ বিদ্যুতায়ন করে ফেলেছি। মানে শতভাগ বিদ্যুৎ দেয়ার ক্যাপাসিটি আমরা অর্জন করেছি। কে জানত এ ধরনের যুদ্ধ হবে?’

বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার দেশের সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আসেন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি এই খাতের সংকট নিয়ে উঠা নানা প্রশ্ন এবং সমাধান কী, তা নিয়ে কথা বলেন।

গত ১৯ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন সীমিত করার ঘোষণা দেয়ার দিন প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রতি দিন লোডশেডিং হবে এক ঘণ্টা। কিন্তু পরে হচ্ছিল তিন থেকে চার ঘণ্টা। পরে প্রতিমন্ত্রী এও বলেন, অক্টোবর থেকে লোডশেডিং থাকবে না। কিন্তু ৪ অক্টোবর দেশের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর চার বিভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, মধ্যরাতের যে লোডশেডিংয়ের দুঃসহ জ্বালা দেশবাসী এক যুগে ভুলেছিল, ফিরে এসেছে সেই স্মৃতিও।

লোডশেডিংয়ের সময় মোমবাতি জ্বালিয়ে বেচাকেনা করছেন দোকানিরা। ফাইল ছবি

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, তারা লোডশেডিং করাতে বাধ্য হয়েছেন। বলেন, ‘হ্যাঁ, মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কালকে আমার বাড়িতেও রাত ২টার পরে বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা সবাই তো এক সঙ্গে। আমি বলব, একটু ধৈর্য ধরেন।’

দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমার মনে হয় যে বেশি খারাপের দিকে যাচ্ছে না। খারাপের দিকে যাচ্ছে এটা সত্যি কথা, তবে বেশি খারাপের দিকে না।’

‘গরম কমবে ভেবে অক্টোবরের কথা বলেছিলাম’

এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল যে অক্টোবরের দিকে আমাদের ডিমান্ডটা কমে আসবে। অক্টোবর-নভেম্বরে যখন আবহাওয়া একটু ঠান্ডা হয়ে আসবে তখন আমাদের ধারনা ছিল ডিমান্ড কমে আসবে। আর এই কমের মধ্যে আমরা ম্যানেজ করতে পারব।…কিন্তু আবহাওয়ার যে অবস্থা যে পরিমাণ গরম, সেখানে ডিমান্ড আগের মতোই রয়ে গেছে।’

লোডশেডিং কমাতে নতুন সময়সীমা নভেম্বরের যে কথা প্রতিমন্ত্রী আগের দিন বলেছিলেন, সেটিও আবহাওয়ার ওপর ভরসা করে বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘আমি আশা করি নভেম্বরে যদি তাপমাত্রা কমে আসে। তাপমাত্রা যদি নিচের দিকে যায় তাহলে অবশ্যই ডিমান্ড কমে আসবে। তখন আমরা ম্যানেজ করতে পারব।’

আরেক সংকট ডলারের দাম

ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন নতুন এক সংকট তৈরি করেছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘আগে যেখানে আমি ডলার কিনতাম ৮৬ টাকা দিয়ে সেখানে এখন ১০৬ টাকা হয়ে গেছে। তেল আমি ৭৯ ডলারেও কিনেছি সেটা বেড়ে গেছে ১৪০ ডলারে, এখন হয়েছে ১৩০ ডলার। তারপরেও তো লাভ হচ্ছে না। এই যে ডিজেলের দামে যে সমন্বয় করা হয়েছে, এটা করার পরেও প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লস দেবে বিপিসি আগামী বছর। এ জন্য আমি মনে করি একটু ধৈর্য ধরা দরকার।’

পুরো বিষয়টি অর্থনীতির জন্য জটিল সমস্যা তৈরি করেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি পেতে অতিরিক্ত অর্থ দরকার। আমাদের কাছে সে পরিমাণ অর্থ নাই। আবার সে টাকার যোগান হলেও তা দিয়ে ডলার কিনে আমদানি বাড়ালে ডলারের উপর চাপ তৈরি হবে।’

গভীর রাতেও হচ্ছে লোডশেডিং, থাকছে না বিদ্যুৎ। ফাইল ছবি

গ্যাস আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে ইউনিট দর হবে ১০০

স্পট মার্কেটে এখন গ্যাসের দাম, তা এনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে প্রতি ইউনিটের দাম ১০০ টাকা পড়ে যাবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘যে গ্যাস আমি ৫ ডলারে কিনতাম সেটা ২৮ ডলার হয়ে গেছে। এই দরে আনলে পার ইউনিটের (প্রতি ঘনমিটার) দাম পড়ে ৩৫ টাকা।’

এই গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে তা বেশিরভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকবে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘এটা তো জুলুম হয়ে যাবে। আমি যদি কালকে গ্যাস আনি আর বলি বিদ্যুৎ বাড়াতে হবে, তাহলে বিদ্যুতের দাম হবে এক শ টাকা।’

স্পট মার্কেট থেকে না এলেও দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় কাতার ও ওমান থেকে জ্বালানি আসছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা আরও ১১ বছর তাদের থেকে গ্যাস নিতে পারব। আমরা এখন সেটাই পাচ্ছি। কিন্তু শর্ট টার্মে আমরা স্পট মার্কেট থেকে যেটা নিতাম সেটা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। কেউ জানত এই ৫ ডলারের গ্যাস ৪৭ ডলার হয়ে যাবে?’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার এখন যে পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে, তাতে ৭ হাজার মেগাওয়াটের মতো আছে শুধু লিক্যুইড ফুয়েল বা তেলের। ১১ হাজার মেগাওয়াট আমার আছে গ্যাস বেসড পাওয়ার প্ল্যান্ট। আর বাকি সোলার বা বিদেশ থেকে যেগুলো আনছি এগুলো মিলিয়ে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার মেগাওয়াট।

‘এই যে পুরো সিস্টেমের মধ্যে মাত্র ৫ হাজার আমি গ্যাসে চালাতে পারছি, ১১ হাজারের মধ্যে। আমার যদি গ্যাসও থাকত ফুল লোড, সেখানেও আমি হয়ত ৮ হাজার চালাতে পারতাম। সেখানে আমার প্রায় তিন হাজার শর্টেজ।

‘আর তেলের প্ল্যান্ট তো ২৪ ঘণ্টা চালানো যায় না, চলে ৮ ঘণ্টা। আমি যেটা দিনে চালাচ্ছি সেটা রাতে চালাচ্ছি না।

গ্যাসের ঘাটতির মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রকে না গিয়ে শিল্পে দেয়ার কারণও ব্যাখ্যা করেন প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা দেখলাম যদি তাদের না দেই তাহলে এক্সপোর্টে বা ফরেইন কারেন্সি আর্নিংয়ে ব্যাঘাত ঘটবে। এ জন্য বিদ্যুতের প্রোডাকশনও আমরা কিছুটা বন্ধ করে দিয়েছি।’

কয়লা ছাড়া সমাধান নেই

ইউক্রেন যুদ্ধ না থামলে আর স্পট মার্কেটে গ্যাসের নাম নেমে না এলে শীতের পর কী হবে, এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী জানান, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে পরিস্থিতির উত্তরণ হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কয়লা পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো আসতে ডিসেম্বর, জানুয়ারি, মার্চ এ রকম লাগবে সময়।’

কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে মোট চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, এই কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে চলে এলে আর সমস্যা থাকবে না।

তিনি বলেন, ‘কয়লা যদি আমি নিরবচ্ছিন্নভাবে আনতে পারি, ডলারের দাম যদি ঠিক থাকে তাহলে বিদ্যুৎটা ম্যানেজ করতে পারব।’

কয়লা আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটলে কী হবে-সেটিও জানিয়ে রাখেন তিনি। বলেন, ‘সেখানেও যদি ডিসরাপশন (কয়লা আমাদানি) হয় তাহলে সেটা ম্যানেজেবল হবে না।’

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে রাজধানীর দিকে সঞ্চালন লাইনটি চালু হলেও পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘আমাদের পদ্মা সেতুর লাইনটা যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে আরও ছয় শ মেগাওয়াট নিয়ে আসতে পারি পায়রা থেকে। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জায়গায় লোডশেড নাই। কারণ সেখানে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ আছে। আমাদের সমস্যাটা হলো ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী এই বেল্টগুলো।’

গ্রামে কোনো কোনো স্থানে ১০ ঘণ্টাও লোডশেডিং হচ্ছে-এটা জানেনও প্রতিমন্ত্রী। বলেন, ‘এটা ম্যানেজেবল না।’

কর্মশালায় স্মার্ট গ্রিড, ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে দু’টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। স্মার্ট গ্রিড, সাইবার হামলা প্রতিরোধ, ডিজিটালাইজেশন, অটোমেশনের পাশাপাশি প্রযুক্তি নির্ভর ক্লিন এনার্জি এবং ইলেকট্রিক যানবাহন নিয়েও আলোচনা করা হয়।

সভায় বিদ্যুৎসচিব হাবিবুর রহমান, হুয়াওয়ে প্রযুক্তি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যান ঝানফেং বক্তব্য রাখেন।

এ বিভাগের আরো খবর