বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দালালকে টাকা না দিলে পাসপোর্ট নেই

  •    
  • ১১ অক্টোবর, ২০২২ ০৯:১৭

দুই মাস আগেই অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর পরও চিত্র পাল্টায়নি কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। এখনও দালালদের দৌরাত্ম্য কমেনি। যারা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে কাজ করাচ্ছেন, তারা দ্রুত পেয়ে যাচ্ছেন পাসপোর্ট। বাকিদের পাসপোর্টের জন্য ঘুরতে হচ্ছে দিনের পর দিন।

কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি কমছে না। আবেদন থেকে শুরু করে আঙুলের ছাপসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। আর টাকা না দিলে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন, শিকার হতে হয় হয়রানির।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৪ আগস্ট কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সে সময় দুদক কর্মকর্তারা বেশি কিছু অভিযোগের সত্যতাও পায়। সেখান থেকে হাতেনাতে আটক করা হয় তিন দালালকে। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এ অফিসের সহকারী পরিচালক জাহিদুল হককে বদলি করা হয়।

এসব পদক্ষেপের পরও চিত্র পাল্টায়নি পাসপোর্ট অফিসে। এখনও দালালদের দৌরাত্ম্য কমেনি। যারা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে কাজ করাচ্ছেন, তারা দ্রুত পেয়ে যাচ্ছেন পাসপোর্ট। বাকিদের পাসপোর্টের জন্য ঘুরতে হচ্ছে দিনের পর দিন।

ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা দৌলতপুর থেকে পাসপোর্ট নিতে আসা মো. ইমরান হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, কয়েক দিন পর পর তাকে আসতে হয়, পাসপোর্ট না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন। এভাবে প্রায় তিন মাস ধরে তিনি কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ঘুরছেন বলে জানান।

ইমরান জানান, তিন মাস আগে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট প্রয়োজন হলে তিনি সব নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে কাগজপত্র জমা দেন। ছবি তোলেন ও আঙুলের ছাপও দেন। এরপর পুলিশ ভেরিফিকেশনও হয়ে যায় ৯ থেকে ১০ দিনের মধ্যে। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও হাতে পাননি পাসপোর্ট। কী কারণে পাসপোর্ট পাচ্ছেন না সেটাও জানানো হচ্ছে না তাকে। বলা হচ্ছে, ঢাকায় পাসপোর্ট আটকে আছে।

পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে কোনো শৃঙ্খলা চোখে পড়েনি। যে যার মতো ছোটাছুটি করছে অফিসজুড়ে। পাসপোর্ট প্রত্যাশী মানুষের চাপ বেশি থাকার সুযোগ নিচ্ছেন দালালরা।

কথা হয় আরেক ভুক্তভোগী কুমারখালীর মশিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি রংপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ছুটি নিয়ে এসেছেন তার পাসপোর্ট নবায়ন করতে। এদিকে তার ছুটি শেষ হয়ে গেলেও জমা দিতে পরেননি পাসপোর্টের আবেদনপত্র। আবেদনপত্র জমা না নেওয়ার কারণ হিসেবে পাসপোর্ট অফিসের লোকজন তাকে জানিয়েছেন সার্ভার সমস্যার কথা। কিন্তু দালালদের মাধ্যমে অনেকেই জমা দিচ্ছেন তাদের আবেদনপত্র।

মশিউর রহমান আরও জানান, তিনি ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরে পিএইচডি করার জন্য স্কলারশিপ পেয়েছেন। সেখানে যাবেন পড়ার জন্য। কিন্তু সময়মতো পাসপোর্ট হাতে না পেলে তিনি যেতে পারবেন কি না- এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

আরেক সেবাগ্রহীতা মো. হাসান বলেন, ‘আমি সৌদি আরব যাওয়া জন্য পাসপোর্ট নবায়ন করতে আবেদন করেছি। কিন্তু ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তোলার জন্য দুই দিন সকাল ৭টার সময় এসেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তুলতে পারছিলাম না। এদিকে আজই ঢাকায় পুরাতন পাসপোর্ট জমা দিতে হবে মেডিক্যালের জন্য। আমি পাসপোর্ট অফিসের অনেককেই আমার কাজটা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি আমার সমস্যার কথা বলে। কিন্তু সবাই নিয়মের কথা বলেন। পরে এলাকার এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে টার্মিনালের সামনের দোকানের এক দালালের মাধ্যমে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে ১ ঘণ্টার মধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তুলেছি। দালালের মাধ্যমে কাজ করালে কোনো নিয়ম লাগে না। আমার কয়েক দিনের অভিজ্ঞতায় যা দেখলাম, এখানে দালাল ছাড়া কোনো কাজই হয় না।’

এসব নিয়ে জানতে চাওয়া হলে কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমি এই অফিসে নতুন এসেছি। অনেক লোকের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। কয়েক দিন আগে সার্ভারের সমস্যা হয়েছিল। এখন সার্ভার সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এখন সেবাগ্রহীতারা ঠিকমতো পাসপোর্ট ডেলিভারি নিতে পারছেন। ফিঙ্গার প্রিন্টসহ যে সমস্যা রয়েছে, সেগুলো আমরা দেখছি। যে সমস্যাগুলো অতীতে ছিল, সেগুলো আগামীতে ইনশাআল্লাহ্ আর থাকবে না।

‘আমি এখানে আসার আগে এখানে দুদকের অভিযান হয়েছিল। আমি চেষ্টা করব আমার অফিসে এ রকম কাজ যেন আর কেউ না করে। আমি দিনে দুই-চারবার নিচে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি কার কী সমস্যা, কেউ কোনো সমস্যা করছে কি না। এ ছাড়া কেউ যাতে টাকা-পয়সা নিতে না পারে, সেসব বিষয়ে আমি তদারকি করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর