অক্টোবরে লোডশেডিং থাকবে না বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি রাখতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। এক মাস পিছিয়ে এবার নভেম্বরের কথা বলেছেন তিনি, সে সময় শীত চলে আসার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা আসলে কমে যাবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, হঠাৎ করে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে ১ হাজার মেগাওয়াট। অন্যদিকে গত সপ্তাহের গ্রিড বিপর্যয়ের পর আরও ৫০০ মেগাওয়াট। স্বাভাবিক হয়নি ঘোড়াশাল- আশুলিয়া গ্রিড লাইন। ফলে সেই ঘাটতি পোষাতে হচ্ছে লাগাতার লোড শেডের মাধ্যমে। সব মিলে গত এক সপ্তাহে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে দেড় হাজার মেগাওয়াট।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানি সাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে যখন সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিমন্ত্রী যখন লোডশেডিংয়ের কথাটি জানানো হয়, তখন এতটা ভোগান্তির বিন্দুমাত্র আভাসও দেয়া হয়নি।
বরং একেক এলাকায় সূচি করে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হলে ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন কেন করতে হবে, এ নিয়েও কথা হচ্ছিল। তবে প্রথম দিন থেকেই দেখা যায়, এই সূচির বাইরেও বিদ্যুৎ যাচ্ছে যখন-তখন।
সে সময় তীব্র গরমে জীবন ছিল উষ্ঠাগত। ভরা বর্ষায় দেখা মিলছিল না বৃষ্টির। আবহাওয়ার এই উত্তপ্ত হয়ে উঠার মধ্যে বিদ্যুতের যাওয়া আশায় তীব্র ভোগান্তির মধ্যে প্রথমে জানানো হয় সেপ্টেম্বরের শেষে এবং পরে জানানো হয় অক্টোবর থেকে লোডশেডিং সহনীয় হয়ে আসবে।
আবহাওয়া এখন আর আগের মতো অতটা গরম নয়, ফলে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে কিছুটা। লোডশেডিং কিছুটা কমেও আসছিল। এর মধ্যে গত ৪ অক্টোবর দুপুরে হঠাৎ করে বিদ্যুৎহীন হয়ে যায় দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকা। সেদিন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড ফেল করার পর ঘণ্টা আটেক সময় উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় কাটায় দেশের কোটি কোটি মানুষ।
সেদিন রাত ১০টার মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও পরদিন থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে। বিপর্যয়ের আগে যেখানে দিনে এক বা দুইবার বিদ্যুৎ যাচ্ছিল, সেখানে এই সংখ্যাটি চার বা পাঁচ বা ছয়ে গিয়ে ঠেকছে। কখনও আধা ঘণ্টা, কখনও এক ঘণ্টা, কখনও তার চেয়ে বেশি সময় বিদ্যুৎহীন অবস্থায় কাটছে সময়। এমনকি রাত আড়াইটা, সাড়ে তিনটা-এমন সময়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বৈদ্যতিক পাখা। যাদের বাড়িতে বিকল্প ব্যবস্থা করা নেই, তাদের ঘুম উধাও হয়ে যাচ্ছে লোডশেডিংয়ে।
তবে পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিডের মাধ্যমে যে চার বিভাগ রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, সেখানে লোডশেডিংয়ের মাত্রা সহনীয়, কোথাও কোথাও নেইও। তবে বাকি চার বিভাগের পরিস্থিতি উন্নতির আভাস নেই।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী নভেম্বরের আগে লোডশেডিং কমার আশা দেখছি না।…আমরা চেয়েছিলাম অক্টোবর থেকে কোনো লোডশেডিংই থাকবে না। কিন্তু সেটা আমরা করতে পারলাম না। কারণ, আমরা গ্যাস আনতে পারিনি। এই মাসটা (অক্টোবর) একটু কষ্ট করতে হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গ্যাসের সরবরাহ গত এক সপ্তাহে কমেছে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে বন্ধ করা হয়েছে কয়েকটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। গ্যাসের সংকট বাড়ল কেন, সেই প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন ইন্ডাস্ট্রিতে গ্যাস দিতে হচ্ছে। করোনার পর শিল্পকারখানায় উৎপাদন বেড়ে গেছে।’
উত্তরের দুই বিভাগে চাহিদার সমান সরবরাহের বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী জানান, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে কয়লা উৎপাদন স্বাভাবিক হয়ে আসায় বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বেড়েছে। অন্যদিকে সেচের চাহিদা কমায় বিদ্যুৎ লাগছে কম।
অন্যদিকে বরিশাল ও খুলনা বিভাগে চাহিদা ও উৎপাদনে ভারসাম্য আছে। বরিশাল বিভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে উদ্বৃত্ত। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলা ও খুলনা বিভাগের ঘাটতি পূরণ করছে।