দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর আরেকটি স্বপ্নপূরণ হয়েছে সোমবার। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পর খুলে দেয়া হয়েছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার কালনা পয়েন্ট ও নড়াইলের লোহাগড়ার মধুমতী সেতু।
সোমবার দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সেতুটির উদ্বোধন করেন। এরপর সেতুতে যান চলাচল শুরু হয়। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে মধুমতীর দুই পাড়ের মানুষের উচ্ছ্বাস।
চরকালনা গ্রামের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ৪২ বছর বয়সী জামাল হোসেন বলেন, ‘কালনা সেতু আমাদের প্রাণের দাবি ছিল। দেরিতে হলেও সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আজ সেটি উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। সেতুটি চালু হওয়ায় আমাদের এলাকা এবং নড়াইল জেলাসহ পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজে দেশব্যাপী পাঠানো সম্ভব হবে। কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন। ঢাকার মানুষ মধুমতী ব্রিজ পার হয়ে অনায়াসে বেনাপোল বর্ডার হয়ে ভারত যেতে পারবেন। যাতায়াতের জন্য একটা নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে।’
১৪৪ নম্বর চরজঙ্গল মুকুন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘মধুমতী নদীর কালনায় খেয়া ও ফেরি পারাপারে আমাদের খুব ভোগান্তি হতো। টাকা পয়সাও খরচ হতো বেশি। ব্রিজ চালু হওয়ায় আমাদের আর ভোগান্তি থাকবে না। শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষাগ্রহণেও সুবিধা হবে।’
লোহাগড়া গ্রামের হাবিবুর রহমান, হাবিল মোল্লা, আহম্মদ আলী শেখ, নাসির উদ্দিন, শংকরপাশা গ্রামের জিকরুল শেখ, নারগিস সুলতানা, কমলেশ বিশ্বাসসহ কথা হয় অনেকের সঙ্গে। তারা জানান, এখন জেলার লোক খুব সহজেই ঢাকা ও যশোর-বেনাপোলে যেতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন, তিনি কথা রেখেছেন। এই জন্য তাকে সবাই ধন্যবাদ জানান।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতুর পূর্বপাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শংকরপাশা এবং পশ্চিমপাড়ে নড়াইল লোহাগড়া অংশ। মাঝে প্রবাহিত মধুমতী নদী। এই নদীর ওপরই নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতু।
এলাকাবাসী এটাকে এতোদিন কালনা সেতু হিসেবে চিনলেও পরে প্রধানমন্ত্রী সেতুটির নাম পরিবর্তন করে মধুমতী সেতু নামকরণ করেন।
সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘মধুমতী দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। এটি কেন্দ্রীয় স্প্যান। ১৫০ মিটারের স্টিলের তৈরি স্প্যানটি ভিয়েতনাম থেকে তৈরি করে আনা হয়েছে।
‘সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। ৬ লেনের সেতুর ৪টিতে দ্রুতগতির এবং দুইটিতে ধীর গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দুই পাশে ৪ দশমিক ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এর মধ্যে ৮টি আন্ডারপাস ও ১৪টি কালভার্ট রয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ৮ লেনবিশিষ্ট টোল প্লাজা। ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৭০ দশমিক ২৮ একর। ফলে সেতুর নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ৯৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।’
তিনি জানান, মধুমতী সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি এই সেতু ভূমিকা রাখবে।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কালনা সেতুর’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর এ সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। কালনাঘাট থেকে ঢাকার দূরত্ব ১০৮ কিলোমিটার। ফলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়াসহ আশপাশ জেলার সড়ক যোগাযোগ ৮৬ কিলোমিটার কমে যাবে।