নওগাঁর বিসিক শিল্পনগরীর একটি প্লটের মালিকের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে তা ব্যাংকে জমা না করার অভিযোগ উঠেছে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
নিয়ম অনুযায়ী উদ্যোক্তারা প্লট ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, ভূমি উন্নয়ন করসহ আনুষঙ্গিক টাকা বিসিক কার্যালয় থেকে চালান ফরম সংগ্রহ করে সরাসরি বিসিকের নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেয়ার কথা। তবে প্রতি মাসে প্লটের আনুষঙ্গিক সার্ভিস চার্জের টাকা অফিসে গিয়ে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন এই দুই কর্মকর্তা।
জেলা কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন ও শিল্পনগরী কর্মকর্তা ওয়াসিম সরকার এই কাজ করেছেন বলে মিলেছে তথ্য। তাদের দাবি, সেই উদ্যোক্তা যে টাকা তাদের দিয়েছেন, সেটি ব্যাংকে জমা হয়েছে। তবে দুই সপ্তাহেও সেই উদ্যোক্তাকে জমার রসিদ দেয়া হয়নি।
ঘটনাটি ঘটেছে বাবু ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের উদ্যোক্তা মো. বাবুর সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি শিল্পনগরী কর্মকর্তা ওয়াসিম সরকারকে এক লাখ টাকা দিয়েছেন।
কেন তার হাতে টাকা দিলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা সরাসরি আমার কাছ থেকে চেয়েছে, যার কারণে আমি ব্যাংকে জমা না দিয়ে বিসিকের অফিসে গিয়ে তাকে জমা দিয়েছি।’
টাকা জমা দেয়ার কোনো রসিদ দিয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না এখনও টাকা জমার রসিদ আমাকে দেয়নি। কয়েক দিন পর নাকি দেবে।
জানতে চাইলে ওয়াসিম সরকার বলেন, ‘বাবু ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের সার্ভিস চার্জ, ভূমি উন্নয়ন করসহ আনুষঙ্গিক বাবদ সর্ব মোট এক লাখ টাকা বাকি ছিল। সেই টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে।’
জমা দেয়ার রসিদ দেখতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি সোমবারের দিকে অফিসে এলে দেখাতে পারব।’
জমার রসিদ এখনও কেন উদ্যোক্তার কাছে দেননি- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
বিসিকের উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুনের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি উল্টো উদ্যোক্তাদের ওপর দোষ চাপিয়ে বলেন, ‘অনেকে অফিস থেকে চালান রসিদ নিয়েও বিসিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করতে দেরি করে। যার কারণে হয়তো তিনি (বাবু) অফিসে এসে টাকা জমা দিয়ে গেছেন।’
১৫ দিন আগে টাকা আপনাদের কাছে দিয়ে গেছেন একজন, তবু তাকে কেন জমার রসিদ দেয়া হলো না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ অভিযোগ করে তবে আমরা খতিয়ে দেখব।’
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি নুরুল মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিসিক শিল্পনগরীর অধীনে যেসব শিল্প-কারাখানার উদ্যোক্তারা আছেন তারা সরাসরি বিসিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করবেন, এটাই নিয়ম।’
তিনি বলেন, ‘বিসিকের কর্মকর্তারা কখনও সরাসরি প্লট ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, ভূমি উন্নয়ন করসহ এসব বাবদ টাকা নিতে পারবেন না, শুধু পানি বিলটা নিতে পারবেন। আর উদ্যোক্তাদের সরাসরি গিয়ে কীভাবে বলেন মাসে মাসে তাদের অফিসে গিয়ে টাকা দিতে হবে? এটা অনিয়ম ও অন্যায়। টাকা আত্মসাতের জন্যই এমনটা করছে তারা।’
যদি টাকা বিসিকের কর্মকর্তারা জমা করেই থাকেন, তাহলে কেন এখনও বাবু ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিককে জমার রসিদ দেয়া হলো না?- এই প্রশ্ন এই কর্মকর্তারও। বলেন, ‘পরে জমা করাটাও নিয়মবহির্ভূত কাজ।’