বীর নিবাস প্রকল্পের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় ৬ মুক্তিযোদ্ধার জন্য ‘বীর নিবাস’ এর নির্মাণকাজ চলছে। তবে ২৬ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সবগুলোর কাজই এখনও কিছু বাকি রয়ে গেছে।
এর মধ্যে উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্তাজ আলীর নিবাসের কাজ গত দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ উপজেলায় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৬টি আবাসন (বীর নিবাস) নির্মাণের জন্য চলতি বছরের ৭ মার্চ দরপত্র আহ্বান করা হয়।
পরে এই কাজ পায় মেসার্স খন্দকার অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারকে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল কার্যাদেশ দেয়া হয়। প্রতিটি বীর নিবাসের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। কিন্তু গত ২৬ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা না হওয়ায় এখনও কোনো মুক্তিযোদ্ধা বীর নিবাসে বসবাস শুরু করতে পারেননি।
এদিকে, বীর নিবাস নির্মাণে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে চার মাস অতিবাহিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মন্তাজ আলী। সরকারের দেয়া নতুন ঘরে বসবাসের স্বপ্ন পূরণে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে।
মন্তাজ আলী বলেন, ‘মরার আগে বুঝি এ ঘরে থাকতে পারব না? নতুন ঘরের আশায় পুরান ঘরও ঠিক করছি না। মেঘ বৃষ্টি পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল- বীর নিবাসে যেন আমার মৃত্যু হয়। শরীরের যে অবস্থা ভাঙা ঘরেই মৃত্যু হবে। মৃত্যুর আগে বুঝি এই বীর নিবাসে ঘুমাতে পারবো না। একদিন রাজমিস্ত্রী আসলে আরেক দিন আসে না। জুনেই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখন অক্টোবর। সাত মাসে ঘরের কাজ অর্ধেকও হয়নি।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্তাজ আলী
এদিকে বিল না পাওয়ায় কাজ বন্ধ আছে বলে জানিয়েছেন মেসার্স খন্দকার অ্যান্ড ব্রাদার্সের ঠিকাদার শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বিল না পেলে কাজ করবো কিভাবে? অর্ধেক বিল দেয়ার কথা ছিল। এখনও এক টাকা পাইনি। টাকা না পেলে ঠিকাদার কাজ করবে কিভাবে?’
এ ছাড়া বীর নিবাসের কাজে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না দাবি করে শফিকুর জানান, কাজের জন্য রাখা এক বান্ডিল রড ও ১১ বস্তা সিমেন্ট উধাও হয়ে গেছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেও কোনো সুরাহা হয়নি।
তিনি বলেন, ‘উধাও হওয়া রড, সিমেন্টের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা উপ-সহকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বলেন, ‘বরাদ্দ নাই তাই কাজ বন্ধ। বরাদ্দ আসলে আবার কাজ শুরু হবে। টাকা ছাড়া তো আর কাজ করা যাবে না। অপেক্ষা করতে হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল হক মৃদুল বলেন, ‘টাকা বরাদ্দ আসবে, ঠিকাদার তো বিল না পেলে কাজ করবে না। ধাপে ধাপে বিল দেবে, ধাপে ধাপে কাজ হবে।’