বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সত্য-সুন্দরের আশায় উড়ল ফানুস

  •    
  • ৯ অক্টোবর, ২০২২ ২২:৫৫

সুনন্দপ্রিয় মহাথের বলেন, ‘প্রবারণা হলো আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের অনুষ্ঠান। আষাঢ়ী পূর্ণিমায় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তিন মাসের জন্য বর্ষাবাস শুরু করেন, যা আশ্বিনী পূর্ণিমায় অর্থাৎ রোববার শেষ হচ্ছে। সোমবার কঠিন চীবরদান শুরু হবে।’

আগুনমুখো ফানুস উড়ে যাচ্ছে আকাশে, বর্ণিল সাজ বৌদ্ধবিহারে। জমকালো আয়োজনে রোববার রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে উদযাপন হয় প্রবারণা উৎসব। নানা ধর্ম ও পেশার মানুষ সেখানে উৎসবে সামিল ছিলেন ।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিল নানা আয়োজন।

প্রবারণা উৎসবের একটি পর্ব। ছবি: নিউজবাংলা

বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসের বর্ষাবাস সমাপনীতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্‌যাপন করেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা।

বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সুনন্দপ্রিয় মহাথের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রবারণা হলো আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের অনুষ্ঠান। আষাঢ়ী পূর্ণিমায় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তিন মাসের জন্য বর্ষাবাস শুরু করেন, যা আশ্বিনী পূর্ণিমায় অর্থাৎ রোববার শেষ হচ্ছে। সোমবার কঠিন চীবরদান শুরু হবে।’

দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়। এই আয়োজনে ছিল বুদ্ধপূজা, শীল গ্রহণ, অষ্টপরিষ্কারসহ মহাসংঘদান ও পবিত্র ত্রিপিটক পাঠ। পাশাপাশি প্রদীপপূজা, আলোকসজ্জা, ফানুস ওড়ানো এবং দেশের অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করা হয়।

প্রবারণা উৎসবে ফানুস উড়ছে খাগড়াছড়িতে। ছবি: নিউজবাংলা

মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফেডারেশন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার, ঢাকার অধ্যক্ষ ধর্মমিত্র মহাথের-এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে ছিলেন ঢাকা উত্তরের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুম গনি তাপসসহ জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা।

বাড্ডার বৌদ্ধ বিহারে প্রবারণা পূর্ণিমার অনুষ্ঠানে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: নিউজবাংলা

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ প্রধানমন্ত্রী অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেই আজকে সারা পৃথিবীতে সম্মানিত হন আমাদের প্রধানমন্ত্রী, তিনি প্রশংসিত মানেই ১৬ কোটি মানুষ প্রশংসিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ রীতিমত একটা ধর্মভিত্তিক ভাগ হয়ে যায়। পৃথিবীতে কোনো দেশ এভাবে ধর্ম দিয়ে বিভাজন হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী দ্বারা যখন আমরা নিয়ন্ত্রিত ছিলাম তখন জাতির পিতা বুঝেছিলেন এটা আমাদের প্রকৃত জায়গা নয়। আমাদের প্রকৃত অধিকারের জন্য আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি সেই সময় আমাদের যে শিক্ষিত সমাজকে সংগঠিত করেছিলেন।

‘যে জাতিটা একটা ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে জন্ম নিল, সেই জাতিটাকে তিনি অসাম্প্রদায়িক একটা জনপদে পরিণত করে ফেললেন। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে ফেললেন।’

খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি সংবিধান দিয়েছেন। আমাদের ৭২-এর সংবিধান রয়েছে; যে সংবিধান সম্প্রীতির কথা বলে। যে সম্প্রীতি নিয়ে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল।

‘এরপর বাংলাদেশের সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়ে গেছে। অসাম্প্রদায়িকতা বিনষ্ট হয়ে গেছে। দেশকে বিভাজন করা হয়েছে ধর্ম দিয়ে, সমাজ দিয়ে, অর্থ দিয়ে। এ দেশ এগিয়ে যেতে পারেনি। অন্ধকার থেকে অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। কারণ ধর্মকে কখনও ক্ষমতার হাতিয়ার হতে পারে না, এটা প্রমাণ হয়েছে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ধর্মের ভিত্তিতে কোনো রেখাপাত চান না, বিভক্তি চান না। তিনি ভালোবাসা তৈরি করতে চান। হানাহানি-বিরোধ থেকে মুক্ত থেকে আগামী প্রজন্মের জন্য সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে দিতে চান। অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’

খাগড়াছড়িতে প্রবারণা

পূর্ণিমা উপলক্ষে মারমা সম্প্রদায়ের রিঃছিঃমিঃ উৎসব হয়েছে।

রোববার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি চেঙ্গী নদীর রাজ্যমনি পাড়া এলাকায় রিছিমি ভাসানো হয়। এ সময় হাজারও পূর্ণার্থী নদীর পাড়ে মোম বাতি প্রজ্জলন করে প্রার্থনা করেন। রিঃছিঃমিঃ উৎসব দেখতে শত শত দর্শণার্থীর ভিড় ছিল।

খাগড়াছড়িতে প্রবারণা উৎসবের একটি পর্ব। ছবি: নিউজবাংলা

প্রতিবছরের মতো জেলা শহরের প্রাচীনতম য়ংড বৌদ্ধ বিহার ও সারিসূত্র বৌদ্ধ বিহারের আয়োজনে রিছিমি'র আয়োজন করা হয়।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, জলদেবতা বা উপগুপ্ত বুদ্ধের বন্দনায় নদীতে প্রার্থনা করলে মঙ্গল বয়ে আসবে। তাই প্রবারণা পূর্ণিমার এই তিথিতে প্রতিবছর উপগুপ্ত বুদ্ধকে উদ্দেশ্য করে মারমারা রিঃছিঃমিঃ ভাসান।

রোববার বিকেলে য়ংড বৌদ্ধ বিহার ও সারিসূত্র বৌদ্ধ বিহার থেকে রিঃছিঃমিঃ কল্পতরী নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়। বর্ণিল পোষাকে নানা বয়সীরা শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পরে জেলা সদরের রাজ্য মনি পাড়ার চেঙ্গী নদীতে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২ টি রিঃছিঃমিঃ ভাসানো হয়।

মোমবাতি জ্বেলে খাগড়াছড়িতে প্রবারণা উৎসবের একটি পর্ব। ছবি: নিউজবাংলা

প্রবারণা পূর্ণিমাতে ভগবান বুদ্ধের চুল স্মৃতি বিজড়িত ফানুস প্রজ্জলন করা হয় চেঙ্গী নদীর পাড় সহ বিহারে বিহারে। সোমবার থেকে মাসব্যাপী দানোত্তম কঠিন চীবরদানোৎসব পালন করবেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।

এ বিভাগের আরো খবর