পুরনো কাপড় বিক্রি করেন নূর উদ্দিন। এ দিয়েই চলে সংসার। রোববার ভোরে কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ শহরে। সেখানে থেকেই ফিরছিলেন বাড়িতে।
কথা ছিল, বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী ও সন্তাদের সঙ্গে নাস্তা করবেন। পরে বের হবেন কাপড় বেচতে। তবে তা আর হয়ে ওঠেনি।
সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কাচঁপুর এলাকায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে নূর উদ্দিনের।
এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে মারা যান আরও চারজন।
নিহত নূর উদ্দিনের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিনায় তার মরদেহ রাখা। অশ্রুসিক্ত একমাত্র কিশোর ছেলে বাবার জানা যার পড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
পাশের ঘরে স্ত্রী আর দুই মেয়ের আর্তনাদে শান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন আশাপাশের মানুষ। সৎ জীবনযাপন ও কষ্ট করে নূর উদ্দিনের সংসার চালানোর কথা ছিল তাদের মুখে মুখে।
শুধু নূর উদ্দিনই নন। এ দুর্ঘটনায় নিহত বাকি চারজনও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে তাদের পরিবারেও চলছে শোকের মাতম।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, নিহতদের সবাই ছিলেন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকটিতে। নূর উদ্দিন ছাড়া বাকি নিহতরা হলেন- ইজিবাইকেরচালক হানিফ মিয়া, পোশাক কারখানার শ্রমিক মো. মামুন ও টেক্সটাইল মিলের শ্রমিক জীবন সরকার ও সেলুনকর্মী জামাল মিয়া।
নিহত জামালের ছোট ভাই টিপু বলেন, জামাল কাঁচপুরে একটা সেলুনে কাজ করতেন। ভাড়া থাকতেন শিমরাইল এলাকায়। সকালে সেলুনে যেতেই ওই ইজিবাইকে চড়ে বসেছিলেন। দুর্ঘটনার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে।
টিপু বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায়। সেখানে ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তান আছে। তারা লাশের অপেক্ষায় আছে।’
দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ইজিবাইক ও ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রোবাস
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, বেলা পৌনে ১১টার দিকে গুরুতর চারজনেক ঢাকা মেডিক্যালে আনার পরপরই তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জামালও। তাদের মরদেহ পরে হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকা থেকে ৬ যাত্রী নিয়ে ইজিবাইকটি উল্টো পথ ধরে কাঁচপুর সেতু পার হচ্ছিল। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে এটির সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং মাইক্রোবাসটিরও সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শিমরাইল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. শরফুদ্দিন জানান, দুর্ঘটনাকবলিত ইজিবাইক ও মাইক্রোবাসটি থানায় আছে। তবে মাইক্রোবাসের চালককে আটক করা যায়নি। এ ঘটনায় সড়ক আইনে মামলার হয়েছে।
মহাসড়কে কিভাবে উল্টোপথে ইজিবাইক চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা অলিগলি ধরে মহাসড়কে ওঠে পড়ে। আমরা তাদের আটক করে জরিমানা করি। তারপরও তাদের থামানো যাচ্ছে না।’