মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সোমবার। আর এই সম্মেলনের প্রস্তুতি ঘিরে খরচ করা হয়েছে বিপুল টাকা। জেলায় তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে চার শতাধিক। রয়েছে হাজারেরও বেশি ফেস্টুন। কেবল এই তোরণ আর ফেস্টুনেই খরচ করা হয়েছে কোটি টাকা।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর হচ্ছে মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সম্মেলন। এই আয়োজন ঘিরে শুধু পৌর শহরেই ৭৯টি তোরণ নির্মাণ হয়েছে। তথ্যমতে, একেকটি তোরণে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে ফেন্সুগঞ্জ থেকে সাতগাঁও পর্যন্ত চার শতাধিক তোরণ নির্মাণে খরচ করা হয়েছে ৬০ লাখ টাকার বেশি।
তোরণের পাশাপাশি সড়কের দু’পাশ, বিদ্যুতের খুঁটি ও বিভিন্ন দেয়ালে ব্যানার-ফেস্টুনের ছড়াছড়ি। জায়গা না থাকায় কোর্ট রোডে অনেক ফেস্টুন রাস্তার পাশে সীমানা প্রাচীরের মতো করে রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সবাইকে যার যার অবস্থানে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলছেন তখন যুবলীগের এই ব্যয়বহুল প্রচার অনেকেই দেখছেন নেতিবাচকভাবে।
কেদ্রীয় নেতারা বলছেন- এমন কোনো নির্দেশনা তারা দেননি। তবে যুবলীগের কেউ কেউ ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলেছেন, কেন্দ্রের কোনো কোনো নেতা ব্যাপক তোরণ ও সাজসজ্জার নির্দেশ দিয়েছেন।
কেউ কেউ আবার কেন্দ্রীয় নেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য নিজ উদ্যোগেও তোরণ ও ফেস্টুন নির্মাণে ঝুঁকেছেন।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কৃচ্ছ্রসাধন নির্দেশনার কারণে বরং তোরণ কম নির্মাণ করা হয়েছে। পরশ ভাই নির্দেশ দিয়েছেন, যত কম করা যায় তত ভাল। নয়তো আরও তোরণ নির্মাণ হতো।’
সরেজমিনে শুধু মৌলভীবাজার পৌর শহর ঘুরে দেখা যায়, সরকারি কলেজ থেকে চাঁদনী ঘাটের ইসলামপুর পর্যন্ত ৪৬টি, পুরনো হাসপাতাল রোড থেকে সম্মেলনস্থল পর্যন্ত ১৩টি, শাহ মোস্তফা রোড থেকে বেরীরপাড় পর্যন্ত ১০টি ও শ্রীমঙ্গল রোডে ১০টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রতিটি রোডে নতুন নতুন তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগানোর কাজ চলছে। ডেকোরেটর শ্রমিকরা রাত-দিন কাজ করছেন। পুরো শহরই তোরণ, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।
শ্রীমঙ্গল শহরেও শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
যুবলীগের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, সম্মেলনকে উপলক্ষ করে সারা জেলায় চার শ’র বেশি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
শহরের পুরনো হাসপাতাল রোডে তোরণ লাগানোর কাজে ব্যস্ত রাজ ডেকোরেটর্সের শ্রমিক সালাম মিয়া জানান, একেকটি তোরণ নির্মাণের জন্য তাদেরকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। আর তোরণে লাগানো ব্যানার ও ফেস্টুন আলাদাভাবে নিজেদের খরচে লাগাতে হয়।
জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক মিনার আহমদ বলেন, ‘যে সম্মেলন হচ্ছে তাতে আমরা উজ্জীবিত। মৌলভীবাজারের ইতিহাসে এত বড় পরিসরে কোনো সম্মেলন হয়নি। আমরা এই সম্মেলনের সাফল্য কামনা করছি। নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে নিজেদের খরচে এরকম হাজার হাজার বিলবোর্ডও ব্যানার লাগিয়েছেন।
জেলা যুবলীগের সম্মেলন ঘিরে তোরণ আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে মৌলভীবাজার শহর। ছবি: নিউজবাংলা
স্মার্ট সাইনের পরিচালক নাইম আহমেদ বলেন, ‘প্রতিদিন অসংখ্য ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডের অর্ডার আসছে। ব্যবসাও ভাল হচ্ছে। এই সম্মেলনকে উপলক্ষ করে আমাদের মতো দোকানগুলোতে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সভাপতি নাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের সার্বিক প্রস্তুতিই ধীরে ধীরে সম্পন্ন হওয়ার পথে। সম্মেলনে আমরা প্রায় দশ হাজার লোক সমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
‘নেতাকর্মীরা নিজ উদ্যোগে এসব তোরণ লাগাচ্ছে। তোরণ লাগানোর জন্য আমরা কাউকে নির্দেশ দেইনি এবং কেন্দ্রও আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেনি।’
এদিকে সম্মেলন ঘিরে জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২০ জন প্রার্থী কেন্দ্রে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সভাপতি পদে ৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১১ জন রয়েছেন।
সভাপতি পদপ্রত্যাশীরা হলেন- সৈয়দ রেজাউর রহমান, সৈয়দ সেলিম হক, পান্না দত্ত, শেখ রুমেল আহমদ, মবশ্বির আহমদ, মহিউদ্দিন চৌধুরী, মুজিবুর রহমান, সিতার আহমদ ও মতিউর রহমান। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা হলেন- হোসেন মোহাম্মদ ওয়াহিদ সৈকত, সুমেষ দাশ, গৌছ উদ্দিন নিক্সন, হাবিবুর রহমান, তুষার আহমদ, সাদমান সাকিব চৌধুরী, সন্দ্বীপ দাস, আবদুল আজিজ, আসাদুজ্জামান রনি, সাইফুর রহমান ও সৈয়দ নাজমুল।
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সোমবার জেলা যুবলীগের এই সম্মেলন হচ্ছে। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সম্মেলন উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এতে প্রধান বক্তা থাকবেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান।
সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি থাকবেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস শহীদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মিছবাহুর রহমান।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৭ সালের ৪ মে মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সবশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন মেলে ২০১৯ সালে।