গোপালগঞ্জের কালনা পয়েন্টে নির্মাণাধীন কালনা সেতুর (মধুমতি সেতু) নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এ সেতু বাংলাদেশের প্রথম ছয় লেনের এবং সবচেয়ে বড় ধনুকের মতো বাঁকা সেতু। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে বলে আশা করেন স্থানীয়রা।
ভার্চুয়ালি সোমবার দুপুরে এ সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতু চালু হলেও এ সেতুটি চালু না হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ পদ্মা সেতুর সুফল পুরোপুরি ভোগ করতে পারছিল না। এ সেতুটি চালুর মধ্য দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না বলেই আশা স্থানীয়দের।
এ সেতুর কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সঙ্গে বেনাপোল বন্দরের যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হবে। এতে সমগ্র বাংলাদেশের সঙ্গে বাড়বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শ্যামল ভট্টাচার্য উদ্বোধনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দিলে একদিকে যেমন এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে, অন্যদিকে বেনাপোলের সঙ্গে টেকসই সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে খুলবে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ব্যবসার প্রসার।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি একই সঙ্গে উদ্বোধন করবেন কালনা পয়েন্টের মধুমতী সেতু ও নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা সেতু।’
গত ২২ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কালনা সেতু পরিদর্শনে আসেন। সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি উদ্বোধন করবেন।’
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যশোর ও নড়াইলসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে কালনা সেতু নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। পদ্মা সেতু পার হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের প্রবেশদ্বার হবে কালনাঘাট। মধুমতি নদীর কালনা পয়েন্টে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মিত হয়েছে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার।
এ সেতু বেনাপোল বন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ১৩০ কিলোমিটার। এখানে সেতুর দাবিতে বহু আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নড়াইলের নির্বাচনী জনসভায় এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে সেতুর কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছিলেন।
মধুমতী সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এ স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। ওই স্প্যানের উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)।
ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।