বগুড়ায় প্রতারকচক্রের খপ্পর থেকে পালাতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে খুন হন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জাকির হোসেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তারের পর এমন দাবি করেছে বগুড়া জেলা পুলিশ।
শনিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাহিনীটি।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে জাকির হোসেনের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে রাতেই অভিযান চালিয়ে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
নিহত জাকির হোসেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তিনি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স করপোরাল ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর বগুড়ার ফুলতলা এলাকায় ব্যবসা করতেন।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন, আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশা ও মোস্তফা কামাল ওরফে কমল। তাদের বয়স যথাক্রমে ২৪ ও ২৫ বছর। তারা দুজনই শাজাহানপুরের কৈ-গাড়ী পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের চক্রের নারী সদস্যদের দিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষকে কৌশলে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিয়ে যান তারা। পরে নারী সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ছবি তুলে তা ফাঁস করে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
গত শুক্রবারও একই কায়দায় কৈ-গাড়ী জবান স্কুলের পাশের একটি ভাড়া বাসায় জাকিরকে ডেকে নেয়া হয়। পরে তাকে সেখানে আটক করে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ তুলে হুমকি দিতে থাকেন চক্রটির সদস্যরা। এক পর্যায়ে তারা জাকিরের কাছে থাকা নগদ ২ হাজার ৩০০ ও বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা উঠিয়ে নেন।
এর মধ্যে সুযোগ বুঝে ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন জাকির। এ সময় আশরাফুল তাকে ধাওয়া করে ছুরিকাঘাত করেন। পরে চক্রের সদস্যরা অবস্থা বেগতিক দেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘খুন হওয়া জাকিরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। জাকির হত্যায় প্রতারক চক্রটির ৮ সদস্য সরাসরি জড়িত। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
এ ঘটনায় জাকিরের স্ত্রী মমতাজ বেগম শাজাহানপুর থানায় মামলা করেছেন। এই মামলায় গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া আশরাফুলের বিরুদ্ধে এর আগেও অস্ত্র আইনে ১টি মামলা চলমান আছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
জেলা পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদ, শাজাহানপুর থানা পুলিশের ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও জেলা ডিবি পুলিশের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) সাইহান ওলিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।