নেত্রকোণার দুর্গাপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আদিবাসী নেতা সুব্রত সাংমা মারা গেছেন। বিএনপি নেতা ও কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ মদদে এ হামলা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সুব্রত। এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
তার মৃত্যুর খবরে দুর্গাপুরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পরেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বিএনপি সমর্থকদের অন্তত ৩০টি দোকানপাট। এ ছাড়া ১৯টি বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
দুর্গাপুর থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম সুব্রত সাংমার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, ‘মৃত্যুর খবরে এলাকায় কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।’
নিহত সুব্রত সাংমা দুর্গাপুরের বহেরাতলি গ্রামের মৃত সুধীর মানকিনের ছেলে। গত ইউপি নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন।
এর আগেরবার তিনি নৌকার চেয়ারম্যান ছিলেন। কুল্লাগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্যও ছিলেন। এ ছাড়া সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত প্রমোদ মানকিনের ভাতিজাও তিনি।
সুব্রতর বোন কেয়া তজু জানান, গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে কুল্লাগড়ার রাশিমনি বাজারে এবং শিবগঞ্জ খেয়াঘাটে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুল আওয়ালের নেতৃত্বে সুব্রতর ওপর দুই দফা হামলা হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ঘটনার পরদিন রাতে দুর্গাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন কেয়া তজু। এ মামলায় চেয়ারম্যান আওয়াল, তার ভাই শামিম আহমেদ ও বদিউজ্জামানসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়। পরে তারা আদালত থেকে জামিন পান।
শনিবার দুপুরে সুব্রত সাংমার মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছালে দুর্গাপুরে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয় যুবলীগসহ সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকরা সংগঠিত হয়ে শিবগঞ্জ এলাকায় বিএনপি নেতা আব্দুল আওয়ালের মার্কেটে এবং বিএনপি নেতা রিয়াজুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে।
এ সময় ওই মার্কেট এবং আশপাশের অন্তত ৩০টি দোকনপাট ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া উত্তেজিত লোকজন বিএনপি নেতা আব্দুল আওয়াল এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের ১৯টি বাড়িতে আগুন দেয়।
এদিকে স্থানীয় আদিবাসীরা দুর্গাপুরের উৎরাইল বাজারে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দিয়ে দুর্গাপুর-শ্যামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
দুর্গাপুর থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফকরুজ্জামান জুয়েলের নেতৃত্বে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’