সারা বছরজুড়েই পর্যটকদের ভিড় দেখা যায় সাজেক ভ্যালিতে। তবে ছুটির দিনগুলোতে এখানে উপচে পড়েন পর্যটকরা।
এবার পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি দেখতে দুর্গাপূজার ছুটিকে বেছে নিয়েছেন অনেকেই। তাই বিশেষ এই সময়টিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে সাজেকে।
তবে অপরিকল্পিত সমাগমের ফলে হোটেল রিসোর্টে রুম বুকিং না পেয়ে অসংখ্য পর্যটককে খোলা আকাশের নিচে ও হোটেল রিসোর্টের বারান্দায় রাত্রিযাপন করতে দেখা গেছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭২০ ফুট উচ্চতায় সাজেক ভ্যালির পাহাড় ছুঁয়ে উড়ে যাওয়া সারি সারি মেঘ বিস্ময়কর অনুভূতি দেয় পর্যটকদের। তাই ছুটি মানেই উপচেপড়া ভিড় থাকে সাজেক ভ্যালির রুইলুইপাড়া, কংলাক পাহাড় ও লুসাই গ্রামে।
দেশের সবচে বড় ইউনিয়ন সাজেক। আয়তন প্রায় ৭০২ বর্গমাইল। ১৮৮০ সালে সৃষ্টি হয় সাজেক ইউনিয়ন। চলতি শতকের শুরু থেকে রুইলুই পাহাড়কে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় সাজেক পর্যটন। পরিবার, স্বজন আর বন্ধুদের সঙ্গে অবকাশ যাপনের জন্য অনেকের কাছেই এই এলাকাটি এখন প্রথম পছন্দ। বিশেষ করে, শীত মৌসুমের ছুটিগুলো সেখানে দারুণ উপভোগ্য। তাই সেখানে তখন ভিড়ও থাকে বেশি ।
তবে এবার শীত এখনও না এলেও দুর্গাপূজার ছুটিতে পর্যটকদের অস্বাভাবিক উপস্থিতি বিপাকে ফেলেছে হোটেল রিসোর্ট মালিকদেরও। একসঙ্গে অসংখ্য পর্যটকের স্থান সংকুলান করতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
সাজেক কর্তৃপক্ষ বলছে, বছরের শেষ দিকে অর্থাৎ অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে পর্যটকরা হোটেল রিসোর্ট বুকিং বেশি দেন। এর মধ্যে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এবারের দুর্গাপূজার ছুটিতে এত পর্যটকের আগমণ ঘটবে তা তাদের কল্পনারও বাইরে ছিল।
২০০০ সালের পর রুইলুই পাহাড়কে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় সাজেক পর্যটন
বিপুল সমাগমের ফলে হোটেল রিসোর্টগুলোতে পর্যটকদের খরচও হচ্ছে বেশি। কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক অঞ্জন দাশ বলেন, ‘জীবনে প্রথমবার পরিবার নিয়ে সাজেকে ঘুরতে এসেছি। সময়টি উপভোগ করলেও এখানে খাবার ও হোটেল রিসোর্টের খরচ অনেক বেশি মনে হয়েছে।’
রঙামাটির কাপ্তাই থেকে সাজেকে যাওয়া জীবন কান্তি তনচঙ্গ্যা বলেন, ‘কলেজ বন্ধ, তাই বন্ধুদের নিয়ে সাজেকে এসেছি। চারদিকে শুধু মেঘ আর মেঘ। তবে হোটেল রিসোর্টের খরচ এখন মাত্রাতিরিক্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভাগ্য ভালো। কারণ আগে থেকেই রুম বুকিং নিয়েছি। এখানে এসে দেখছি, অনেকেই বারান্দায় এমনকি খোলা আকাশের নিচেও রাত কাটিয়েছেন।’
নিজেদের সব কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে জানিয়ে সাজেকের ‘মেঘপুঞ্জি’ হোটেল রিসোর্টের ম্যানেজার পুষ্প চাকমা বলেন, ‘দুর্গাপূজার ছুটি বেশি দিন হওয়ায় এবার পর্যটক বেশি। অবস্থা এমন যে, হোটেল রিসোর্টে জায়গা না পেয়ে স্থানীয় একটি প্রাইমারি স্কুলেও আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই।’
খোলা আকাশের নিচে পর্যটকদের রাত্রিযাপন বিষয়ে সাজেকের হোটল, রিসোর্ট ও কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেববর্মন বলেন, ‘এবার পূজার ছুটিতে অপরিকল্পিতভাবেই অনেকে চলে এসেছেন। রিসোর্ট এবং কটেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আগে যোগাযোগ না করায় অনেকেই রুম বুকিং করতে পারেনি। এতে প্রায় তিন শতাধিক পর্যটক বিপাকে পড়েছেন।’
সুপর্ণ জানান, সমিতির অধীনে মধ্যে মোট ১১২টি রিসোর্ট, কটেজ, হোটেল রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, পূজার ছুটিতে এবার তাদের ১ কোটিরও বেশি টাকা আয় হবে।