জামায়াতের সঙ্গে জোট ওপেন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি এও বলেছেন, এক সময় নির্বাচনি জোট হয়েছিল বলে সারা জীবন বিএনপি-জামায়াত বলতে হবে এমন নয়।
বিএনপির সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে জামায়াতের একটি ইউনিটের রুকন সম্মেলনে দলটির আমির শফিকুর রহমান বক্তব্য রাখার পর বিএনপির কোনো নেতা এই প্রথম সরাসরি বক্তব্য রাখলেন।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন নয়’ বিষয়ে এই সভার আয়োজন করে বিএনপিপন্থি সংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম।
টুকু অবশ্য কিছুদিন আগে জামায়াতের সঙ্গে জোট ত্যাগের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে সেই বক্তব্য ছিল অনেকটাই পরোক্ষ, যার যেকোনো ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব।
‘যারা ধর্মীয় রাজনীতি করে তাদের সঙ্গে আমাদের নির্বাচনি জোট হয়েছিল’ উল্লেখ করে এবার টুকু বলেন, এর অর্থ এই না যে আওয়ামী সারাজীবন বিএনপি-জামায়াত বলবে। আমরা ওপেন করে দিয়েছি। যুগপৎ আন্দোলন করব। যার যা শক্তি আছে তা নিয়ে মাঠে আসব।‘
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট চলছে সেই ১৯৯৯ সাল থেকে। সম্প্রতি ধর্মভিত্তিক দলটি আমির শফিকুর রহমান একটি রুকন সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে দলের কর্মীদেরকে জানান, বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট ভেঙে গেছে। দুই দল যুগপৎ আন্দোলন করবে, কিন্তু জোটে আর নেই।
বিএনপির সঙ্গে জামায়াত যে আর জোটবদ্ধ নয়, সেটি আগস্টের শেষে দলটির একটি ইউনিটের রুকন সম্মেলনে জানান দলটির আমির শফিকুর রহমান। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসছিল না
আগস্টের শেষে কুমিল্লার একটি ইউনিটের রুকন সম্মেলনে ভার্চুয়াল আলোচনায় জামায়াত আমির বলেন, ‘আমরা এতদিন একটা জোটের সঙ্গে ছিলাম। আপনারা ছিলাম শুনে হয়তো ভাবছেন কী হয়েছে এখন। হ্যাঁ, হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই জোট দেশের জন্য উপকারী একটা জোট ছিল। ৬ সালের ২৮ অক্টোবর এই জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এবং সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছে। তার পরে আর ফিরে আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বহু চিন্তা করে দেখেছি, এর পর থেকে এই জোট বাংলাদেশের জন্য আর উপকারী জোট নয়।’
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসছিল না। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি কিছু বলবেন না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এও বলেন, এ নিয়ে কিছু না বলা তার গণতান্ত্রিক অধিকার।
জামায়াত ও বিএনপিকে একসঙ্গে উচ্চারণ করায় আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করেন টুকু। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখেছি, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে হাইফেন যুক্ত করে ফেলেছে। গতকালও দেখলাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, জামায়াত-বিএনপি। কিন্তু বিএনপি অন্য একটা আদর্শের দল। তাদের সঙ্গে (জামায়াত) যুক্ত করার কিছু নেই। আমরা একটি গণতান্ত্রিক দল।’
১৯৯৯ সালে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি যখন জোট করে, সে সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও তাতে যোগ দেন। পরে এরশাদ সরে গেলে দলটিতে ভাঙন দেখা দেয়
বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়ে দলটির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘জোট করে সবাইকে এক সঙ্গে নেয়া যায় না। এখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকে। আমরা ২০১৮ সালে তা দেখেছি। অমুক আছে, তমুক নেই। সেটা উপলব্ধি করে তারেক রহমান বলেছেন, যুগপৎ আন্দোলন করব। এই যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল সেটা উঠে গেছে। এখন আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সেই রাজপথে আন্দোলন করব। এবার জয় লাভ করব।’
সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত বলে মনে করেন টুকু। বলেন, ‘আন্দোলনের শুরুতে আমাদের পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করল। আমাদের জীবনে দেখি নাই আন্দোলনের শুরুতে পাঁচজনকে জীবন দিতে হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নেই।’
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আয়োজক সংগঠনের সংগঠনের সভাপতি শ্যামা ওবায়েদ।