নদীর দুই পাড়ে হাজারো মানুষ। মাঝিরা নানা বর্ণের পোশাক পরা, নৌকাও বিচিত্র সাজে সজ্জিত যা সবার দৃষ্টি নন্দন করে। নৌকায় কাঁশি বাজিয়ে, মাঝিদের একত্র জয়ধ্বনিতে এবং গানের তালে তালে বৈঠার টানে অন্য সব নৌকাকে পেছনে ফেলে নিজেদের নৌকাকে সবার আগে নেয়ার চেষ্টা।
এটি হচ্ছে নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী গুটার বিলে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার চিত্র, যা অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। এ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন সব বয়সী মানুষরা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা শিকারপুর ইউনিয়নের সরাইল গ্রামবাসী এর আয়োজন করে। গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা বিভিন্ন বয়সী হাজারো নারী-পুরুষ উপভোগ করেন। প্রতিযোগিতায় দুইটি গ্রুপে চারটি নৌকা অংশ নেয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে নৌকা বাইচ খেলা উপভোগ করেন নওগাঁ-৫ (সদর আসন) আসনের সাংসদ ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন।
তিনি জানান, ঐতিহ্যবাহী এ গুটার বিলে বছরের বেশির ভাগ সময় পানি থাকে। এ বিলে গত প্রায় ৪২ বছর থেকে নৌকা বাইচ হয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে বিলে ডিঙি নৌকা ও শ্যালোমেশিন চালিত ছোট-বড় অসংখ্য নৌকা আসতে থাকে। আর বিকেল ৫টায় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয়রা জানায়, প্রতিযোগিতায় মূলত বড় নৌকা অংশ নেয় যাকে পানসি নৌকা বলে। মাঝিরা নানা বর্ণের পোশাক ও নৌকা বিচিত্র সাজে সজ্জিত দৃষ্টি নন্দন করে। দীর্ঘদিন পর নৌকা বাইচ হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে এক ধরনের উৎসব বিরাজ করছিল।
স্থানীয় দুবলহাটি গ্রামের জাহিদুল হক বলেন, ‘পরিবার নিয়ে এসেছি। দারুন উপভোগ করলাম নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। প্রতিবছর যেন এমন আয়োজন করা হয় সেই প্রত্যাশা করছি।’
নওগাঁ শহরের দয়ালের মোড় এলাকার বাসিন্দা আফসানা বেগম বলেন, ‘আমি স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে এসেছি। অনেক দিন পর নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখলাম। অনেক ভালো লাগলো গ্রাম-বাংলার এই খেলাটি।’
নৌকা বাইচ খেলায় প্রথম স্থান অর্জন করে হাঁসাইগাড়ী গ্রামের আলেফ মোল্লা।
আলেফ বলেন, ‘১৯৭৫ সাল থেকে খেলে আসছি। অনেকবার বিজয়ী হয়েছি এবং পুরস্কার নিয়ে আসছি। বাইচ খেলতে প্রায় ৬০-৬২ জন লাগে। এর মধ্যে ১৭-১৮ জন মাঝি এবং বাকি সবাই বৈঠা টানে। কেউ কাঁশি বাজিয়ে মাঝিদের জয়ধ্বনিতে উৎসাহ জোগায়। ভালো লাগা থেকেই নৌকা বাইচে অংশ নেয়া হয়, তেমনি দর্শকরা উপভোগ করেন। এখন পরবর্তী প্রজন্মও এই নৌকা বাইচ খেলা শিখেছে।’
স্থানীয় শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী রুকুনূজ্জামান টুকু বলেন, ‘গ্রাম বাংলার এই খেলাটি হাজার-হাজার মানুষ উপভোগ করেছে। তাতে করে অংশগ্রহণকারীরাও বেশ উৎসাহিত হয়েছে। সমাজ থেকে মাদকমুক্ত নির্মূল করে যুব সমাজকে মোবাইল আসক্ত থেকে দূরে রাখতে সুস্থধারার এমন বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। আমরা প্রতিবছর এমন আয়োজন করার উদ্যোগ নিব। আশা করছি অন্য এলকার মানুষরাও এটা দেখে অনুপ্রাণিত হবে।’
সাংসদ ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা এবার জাঁকজমকপূর্ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই খেলাকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের মাঝে যেন প্রাণ ফিরে এসেছে। আমার নির্বাচনি আসনের যেকোনো স্থানে এমন আয়োজন করা হলে আমার সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।’