সিলেটে গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটারের দরপত্র আহ্বানের প্রায় এক বছর পর চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে।
দি কনসোর্টিয়াম অব জেনার মিটারিং টেকনোলজি (সাংহাই) লিমিটেড ও হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড, চায়নার সঙ্গে গত সপ্তাহে চুক্তি করেছে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের (জেজিটিডিএসএল)।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে জেজিটিডিএসএলের গৃহস্থালি পর্যায়ের ৫০ হাজার গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসবেন। এতে গ্যাসের অপচয় রোধের পাশাপাশি গ্রাহকরা অতিরিক্ত বিল দেয়া থেকে রেহাই পাবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাথমিক অবস্থায় সিলেটের ৫০ হাজার গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হবে।
প্রথম ডিপিপি অনুযায়ী চলতি বছরের নভেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। মার্চের মধ্যে কাজ শুরু হওয়ার কথা। তবে ডিপিপি সংশোধন করে গত মার্চে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে জালালাবাদ গ্যাস। এতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এখনও শুরু না হওয়ায় এই সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
দেরিতে চুক্তি সম্পর্কে এই প্রকল্পের পরিচালক লিটন চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘২০১৯ সালে এ ব্যাপারে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্প অনুমেদন হয়। এরপর দরপত্র আহ্বান করা হলেও উপযুক্ত দরদাতা পাওয়া যাচ্ছিল না। এছাড়া প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয়েও কিছু অসামাঞ্জস্য ছিল। তাই ডিপিপি সংশোধন করে চলতি বছরে আবার দরপ্রত্র আহ্বান করা হয়।’
এই প্রকল্পে ১২০ কোটি টাকা ব্যয় হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চুক্তির পর জরিপ কাজ শুরু হয়ে গেছে। চলতি বছরেই মাঠ পর্যায়ের কাজও শুরু হবে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ করা যাবে।’
তিনি জানান, গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে একদিকে যেমন গ্যাসের অপচয় রোধ হবে, অন্যদিকে গ্রাহকের প্রতি মাসের খরচও কমবে। দুই চুলার গ্যাসের জন্য এখন প্রতি মাসে গ্রাহক এক হাজার টাকার ওপর বিল দিচ্ছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ছোট পরিবারের এক হাজার টাকায় তিন মাস গ্যাস ব্যবহার করতে পারবে। মাসে তার খরচ পড়বে ৩০০ টাকার মতো। এছাড়া গৃহস্থালি পর্যায়ে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে গ্যাস ব্যবহারে সচেতনতা, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধি এবং মনিটরিং ব্যয়ও কমবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, মিটারের মূল্য মাসিক ভাড়া হিসেবে সমন্বয় করা হবে। কাছাকাছি রিচার্জ পয়েন্ট থেকে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ক্রেডিট কিনে প্রি-পেইড মিটার রিচার্জ করা যাবে। রিচার্জ শেষ হলেও এতে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের সুবিধা থাকবে।
তিনি জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার থাকলেও সিলেটে প্রথমবারের মতো চালু করা হচ্ছে এ পদ্ধতি।
জেজিটিডিএসএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শোয়েব আহমদ মতিন জানান, প্রথমে নগরের শাহজালাল ও হাউজিং এস্টেট আবাসিক এলাকায় পাইলট ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। কারণ সরকারি মালিকানাধীন এই দুই আবাসিক এলাকা পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। এখানে কাজ করা সহজ হবে।
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের শুরুতে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর মিটার স্থাপনের জন্য অবশেষে চায়না কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হল।’
তিনি আরও জানান, অনেকে ম্যাচের কাঠি বাঁচাতে অপ্রয়োজনে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখেন। প্রি-পেইড মিটার যুক্ত হলে তারা এ কাজ থেকে বিরত থাকবেন। অনেক গ্রাহক আছেন, সারা মাস গ্যাস ব্যবহার না করলেও মাস শেষে নির্ধারিত বিল পরিশোধ করতে হয়। তাদের আর গ্যাস না জ্বালালে বিল দিতে হবে না। যতটুকু গ্যাস ব্যবহার করবেন কেবল ততটুকুর বিল দিতে হবে।
জেজিটিডিএসএল কর্মকর্তারা জানান, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতিটি আবাসিক গ্রাহকের মাসিক গড় গ্যাস ব্যবহার ৬৬ ঘনমিটার থেকে ৪০ ঘনমিটারে নেমে আসবে। ফলে গ্রাহকপ্রতি গ্যাস সাশ্রয় হবে গড়ে ২৬ ঘনমিটার। গ্যাস বিতরণ লাইন লিকেজজনিত অপচয়ও রোধ হবে।
বর্তমানে জালালাবাদ গ্যাসের ৩ লাখ আবাসিক গ্রাহক। প্রথম অবস্থায় ৫০ হাজার গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও এই মিটারের আওতায় নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে হেক্সিং ইলেকট্রিক্যালের রিজিওনাল সিইও লিও জু বলেন, ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ এদেশে অনেক প্রকল্পে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। আমরা ১৪ বছর ধরে এ কাজে নিয়োজিত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জালালাবাদ গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশাবাদী।’