বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পূজার আনন্দে বিষাদ ঢেলেছে আকাশ মিয়ার মৃত্যু

  •    
  • ৬ অক্টোবর, ২০২২ ২১:১৭

৩৬০ বছর পুরনো শ্রীশ্রী দয়াময়ী মন্দিরের পুরোহিত নিরঞ্জন ভাদুড়ী বলেন, ‘ঘটনাটি শোনার পর থেকেই নিজের ভেতরে এক ধরনের অস্থিরতা অনুভব করছি। এত বড় একটা উৎসবে একজন মা তার আদরের ধন হারাল। একটা মায়ের বুক খালি হয়ে গেল। এই ছেলেটি আমার বা আপনারও হতে পারত। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

বছর ঘুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য আনন্দের উপলক্ষ হয়ে আসে শারদীয় দুর্গোৎসব। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। কিন্তু একটি মৃত্যু সেই আনন্দের আবহে বিষাদ ছড়িয়ে দিয়েছে।

জামালপুরে বুধবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের সময় ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে ডুবে মারা যান মো. আকাশ মিয়া। আনন্দ আয়োজন উদযাপনকালে ২২ বছর বয়সী এই তরুণের মৃত্যুর শোক ছুয়ে গেছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে।

আকাশ জামালপুর সদর উপজেলার নান্দিনা এলাকার সোজাউর রহমান রানার ছেলে। এই অকাল মৃত্যুতে পরিবারটি শোকে বাকরুদ্ধ। স্থানীয় মুসলিম এবং হিন্দু কমিউনিটির মানুষও মেনে নিতে পারছেন না এই দুর্ঘটনা। তারা বলছেন- আনন্দ উৎসবে এমন মর্মান্তিক ঘটনা কখনোই কাম্য নয়।

বৃহস্পতিবার সকালে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে আকাশ মিয়াকে দাফন করা হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদের এই স্থানটিতেই বুধবার সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জনের সময় পানিতে ডুবে মারা যান মো. আকাশ মিয়া। ছবি: নিউজবাংলা

আকাশ মিয়ার এই অকাল মৃত্যুতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি প্রদীপ কুমার সোম বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস মুকন্দবাড়ির প্রতিমার নিচ থেকে ছেলেটির দেহ উদ্ধার করার পর আমরা সবাই অস্থির হয়ে গেলাম। ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। সব জায়গায় খবর লাগালাম। পরে তার পরিবারের লোকজন এল। রাত ১২টার পর আমরা হাসপাতাল থেকে এলাম।

এ ঘটনায় আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই শোকাহত। এমন দুঃখজনক ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আমাদেরে আরও সচেতন থেকে উৎসব উদযাপন করা উচিত।’

৩৬০ বছর পুরনো শ্রীশ্রী দয়াময়ী মন্দিরের পুরোহিত নিরঞ্জন ভাদুড়ী বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন উৎসবে মুসলমান ছেলেরাই বেশি থাকে। আমরা সবাই মিলে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেই। একটি উৎসবে এমন মৃত্যু কারও কাম্য নয়।

‘ঘটনাটি শোনার পর থেকেই নিজের ভেতরে এক ধরনের অস্থিরতা অনুভব করছি। এত বড় একটা উৎসবে একজন মা তার আদরের ধন হারাল। একটা মায়ের বুক খালি হয়ে গেল। এই ছেলেটি আমার হতে পারত। আপনারও হতে পারত। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

জামালপুরের মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘আনন্দ উৎসবে এমন মর্মান্তিক ঘটনায় সবারই আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সবাইকে ছুয়ে গেছে এই বিয়োগান্তক ঘটনা।’

বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক সাযযাদ আনসারী বলেন, ‘জামালপুরের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন উৎসবে মুসলমান কিশোর-যুবকরা বরাবরই দলে দলে অংশগ্রহণ করে থাকে। সবাই মিলে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে। এটি হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি বড় উদাহর। প্রতিমা বিসর্জনের সময় ছেলেটির এই অকাল মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কারও কাম্য নয়।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার রেসকিউ বোট ক্রু তানজিল আহম্মেদ তন্ময়। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে মো. আকাশ আলী নামের ছেলেটি দুইবার নদে পড়ে যায়। সঙ্গে থাকা বন্ধু-বান্ধবরা দুবারই তাকে নদের পাড়ে তুলে আনে।

‘তৃতীয় বার যখন ছেলেটি নদে পড়ে যায় তখন আর কেউ খেয়ালা করেনি। মিনিট দশেক পর তার অনুপস্থিতি দেখে সঙ্গীয় বন্ধুরা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়।ক দেয় পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ছেলেটিকে নদীতে বিসর্জন দেয়া প্রতিমার নিচ থেকে তাকে উদ্ধার করে।’

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, ‘এই মৃত্যু নিয়ে আকাশের মা-বাবার কোনো অভিযোগ নেই। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় জামালপুর সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর