খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে আচারণ বিধি লঙ্ঘন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে।
মেয়রের বিরুদ্ধে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী মোর্ত্তজা রশিদী দারা।
অভিযোগে বলা হয়, ‘দলীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে প্রকাশ্যে নির্দেশ, নির্বাচনি সভায় অংশগ্রহণ, ভোট না দিলে জনপ্রতিনিধি ভোটারদের দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দিচ্ছেন মেয়র খালেক।’
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে রিটার্নিং অফিসারের পক্ষে অভিযোগ গ্রহণ করেন খুলনা জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মো. ইউসুপ আলী।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘৩ অক্টোবর খুলনা ক্লাবে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী শেখ হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে সভা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোটারদের কাছ থেকে ভোট বুঝে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।’মোর্ত্তজা বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে কেসিসি মেয়র ধারাবাহিকভাবে আচারণবিধি লঙ্ঘন করছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ হারুন মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় মেয়র সঙ্গে ছিলেন, সরকারি গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। পরে তিনি ভোটারদের দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। তিনি প্রভাব খাটিয়ে ভোট বুঝে নিতে চেয়েছেন।
‘৩ অক্টোবরের সভায় মেয়র ভোটারদের বলেন, আপনারা কখন কার সঙ্গে দেখা করেন, কথা বলেন, মোবাইল ট্রাকের মাধ্যমে সব সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়। ভোট গণনার পর আমাদের দলের কয়টা ভোট পড়েছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারবো।’
দারা বলেন, ‘মেয়রের বক্তব্যের ওই ভিডিও আমাদের কাছে আছে। আমরা তা পেনড্রাইভের মাধ্যমে রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভোটাররা ভয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছেন না। আওয়ামী লীগের নেতারা ভোটারদের ভয়ে রেখেছেন। তারা ভোটেরদের কর্মচারী মনে করে হুমকি দিচ্ছেন।’
জেলা পরিষদ (নির্বাচন আচারণ) বিধিমালার ২২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন পূর্ব সময়ে নির্বাচনি এলাকায় প্রচারণা বা নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে তিনি যদি ভোটার হন, তবে শুধু ভোট দেয়ার জন্য কেন্দ্রে যেতে পারবেন। এখানে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, হুইপ, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, মেয়র বা তাদের সমমর্যাদার ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে।
ওই ধারায় আরও বলা হয়েছে, নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনি কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্র, অন্য কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ এবং সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে ব্যবহার করতে পারবেন না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘ক্লোজড ডোরে দলের সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যেতে কোনো বাধা নেই। আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সেই হিসেবে দলীয় প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম।’
খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
খুলনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের তিন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, মোটরসাইকেল প্রতীকে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ, আনারস প্রতীকে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বিএমএর সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম এবং চশমা প্রতীক খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোর্ত্তজা রশিদী দারা।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শেখ হারুনুর রশিদ।