বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

র‌্যাব তো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে, ট্রেনিংও তাদের: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ৬ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:৫৪

‘র‌্যাবের ওপরে তারা যখন স্যাংশন দিল, আমার প্রশ্নটা হচ্ছে র‌্যাব সৃষ্টি করেছে কে? র‌্যাব সৃষ্টি তো আমেরিকার পরামর্শ। আমেরিকা র‌্যাব সৃষ্টি করার পরামর্শ দিয়েছে। আমেরিকা তাদের ট্রেনিং দেয়। তাদের অস্ত্রশস্ত্র, তাদের হেলিকপ্টার, এমনকি তাদের ডিজিটাল সিস্টেম, আইসিটি সিস্টেম-সবই আমেরিকার দেয়া।’

যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শেই র‌্যাব গঠন করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের দেয়া প্রশিক্ষণ অনুযায়ী র‌্যাব তার কার্যক্রম পরিচালনা করে।

বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনে র‌্যাব বিশেষ ভূমিকা রাখায় যুক্তরাষ্ট্র ‘নাখোশ’ হয়েছে কিনা, সে প্রশ্নও তুলেছেন সরকারপ্রধান।

গণভবনে বৃহস্পতিবার বিকেলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘র‌্যাবের ওপরে তারা যখন স্যাংশন দিল, আমার প্রশ্নটা হচ্ছে র‌্যাব সৃষ্টি করেছে কে? র‌্যাব সৃষ্টি তো আমেরিকার পরামর্শ। আমেরিকা র‌্যাব সৃষ্টি করার পরামর্শ দিয়েছে। আমেরিকা তাদের ট্রেনিং দেয়। তাদের অস্ত্রশস্ত্র, তাদের হেলিকপ্টার, এমনকি তাদের ডিজিটাল সিস্টেম, আইসিটি সিস্টেম-সবই আমেরিকার দেয়া।’

একজন গণমাধ্যমকর্মী সরকার প্রধানের কাছে প্রশ্ন রাখেন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কোনো টানাপড়েন চলছে কি না। গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানো, র‌্যাবের ওপর দেশটির নিষেধাজ্ঞাসহ নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরে এই প্রশ্ন রাখেন সেই গণমাধ্যমকর্মী।

পরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমেরিকা যখন স্যাংশন দেয় বা কোনো কথা বলে, বা অভিযোগ আনে, আমার একটাই কথা, যেমন আপনারা ট্রেনিং দিয়েছেন, তেমন তারা কার্যক্রম করেছে। এখানে আমাদের করার কী আছে? আপনাদের ট্রেনিংটা যদি একটু ভালো হতো, তাহলে না কথা ছিল।’

এলিট ফোর্স র‌্যাবের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ফাইল ছবি

‘আমরা শাস্তি দেই, যুক্তরাষ্ট্র দেয় না’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য অপরাধ করলে বাংলাদেশে তার শাস্তির বিধান থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে তেমন নজির নেই বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা সে র‌্যাব হোক, পুলিশ হোক, আর্মি হোক, যে হোক, কেউ যদি অপরাধ করে তার কিন্তু বিচার হয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনারা দেখেছেন পুলিশ ইচ্ছা মতো গুলি করে মারলেও তাদের কিন্তু সহসা বিচার হয় না।

‘শুধু একটা বিচার হলো, আমেরিকার লোক সবাই যখন আন্দোলনে নামল, তখন ওই একটা বিচারই বোধ হয় তারা সারাজীবনে করতে পেরেছে। তা না হলে তো তারা কথায় কথায় গুলি করে মেরে ফেলে দেয়।

‘একটা বাচ্চা পকেটে হাত দিল, গুলি করে মেরে ফেলে দিল। একটা খেলনা পিস্তল নিয়ে তাকে মেরে ফেলে দিল। আমাদের কতজন বাঙালি মারা গেছে, সেখানে কিন্তু তারা কিছু বলেনি। সেই কথাগুলো আমি স্পষ্ট তাদেরকে বলেছি। আমি কিন্তু বসে থাকিনি। আমি মনে করি এটা আমাদের বলার কথা।’

‘যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের নিয়ে চিন্তা করা উচিত’

অন্য এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, ‘স্যাংশন তারা কতোটুকু তুলবে জানি না। তবে স্যাংশন দিয়ে তারা ক্ষতি যতটা করেছে, আমরা যাদের দিয়ে এ দেশে সন্ত্রাস দমন করেছি, তাদের ওপর স্যাংশন দেয়ার অর্থটা কী? সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া?

‘আমার এটাও প্রশ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে, তাহলে কী সন্ত্রাস দমনে তারা নাখোশ? ৪০ বছর ধরে আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, সেই তালেবানের হাতে ক্ষমতা দিয়ে ভেগে চলে আসল আমেরিকার সৈন্যরা।’

যুক্তরাষ্ট্র ‘নিজেদের ব্যর্থতা’ স্বীকার করে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভিয়েতনামে ৩০ বছর যুদ্ধ করল, বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের মদদ দিল, সেভেন ফ্লিট পাঠাতে চাইল। আমরা কিন্তু আমাদের দেশ স্বাধীন করেছি। তাদের নিজেদের চিন্তা নিজেদের করা উচিত।

‘এখন ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে সমানে মদদ দিয়ে যাচ্ছে, স্যাংশন দিচ্ছে। স্যাংশন দিয়ে কার ক্ষতি হচ্ছে? সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। কথায় কথায় একটা দেশ আরেকটা দেশকে স্যাংশন দেয় এটা কেমন কথা?’

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়— আমরা এই নীতিতে বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সমস্যা থাকতে পারে, থাকে। কিন্তু কারও সঙ্গে আমরা ঝগড়া বিবাদে যাই না। যুক্তরাষ্ট্র সময়ে সময়ে আমাদের ওপর নানা ধরনের স্যাংশন, অথবা একসময় জিএসপি বাদ দিল, নানা রকমের ঘটনা ঘটায়।’

গুম প্রসঙ্গে মরিয়ম মান্নান, ফরহাদ মজহারের কথা স্মরণ

বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে যে গুমের অভিযোগ আনেন, সেটি নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘কয়েকটা আন্তর্জাতিক সংস্থা খুব উৎফুল্ল, গুম-খুন, গুম-খুন, গুম-খুন। গুমের হিসাব যখন বের হতে শুরু করল তখন তো দেখা গেল সব থেকে বেশি গুম জিয়াউর রহমানের আমলেই শুরু। তারপর থেকে তো চলছে। তারপর আমরা যখন তালিকা চাইলাম, ৭৬ জনের তালিকা পাওয়া গেল। আর এই ৭৬ জনের মধ্যে কী পাওয়া গেছে, সেটা আপনারা নিজেরাই ভালো জানেন।’

সম্প্রতি মাকে গুম করার দাবি তুলে পরে বিব্রতকর অবস্থায় পড়া মরিয়ম মান্নানের ঘটনাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। উঠে আসে কবি ফরহাদ মজহারের গুমের ঘটনাও, যাকে গুম করার অভিযোগ নিয়ে তোলপাড়ের পর দেখা যায়, তিনি খুলনায় রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়াদাওয়া করছেন, এমনকি বান্ধবীকে টাকাও পাঠান মোবাইল ব্যাংকিংসেবা ব্যবহার করে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর মধ্যে এমনও আছে, মাকে লুকিয়ে রেখে অন্যজনকে শায়েস্তা করতেও মাকে খুন করেছে, গুম করেছে, সে ঘটনাও বের হয়ে যাচ্ছে। আমি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই, আপনারা খুঁজে খুঁজে সেগুলো বের করেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরকে ধরে। কেউ বোনকে লুকিয়ে রেখে, গুম হয়েছে সেটা বলে। কেউ ঢাকা থেকে চলে গেলেন খুলনা। বলা হলো তাকে গুম করা হয়েছে। দেখা গেল নিউ মার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছে খুলনায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে তালিকা, সে তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ভারত থেকে পলাতক কিছু আসামি, তাদের নামও সেই তালিকায়। এটা কেমন করে হয়?’’

গুমের তালিকায় কোনো কোনো নাম আমেরিকায় লুকিয়ে আছে বলেও দাবি করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘সে রকমও তথ্য আছে। বিষয়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরেছি, এই যে গুম গুম করেন আগে দেখেন সেটা কী কারণে?’

এসময় সংবাদকর্মীদের ওপও ক্ষোভ ঝাড়েন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘গুমের ঘটনা যখনই ঘটে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজে বের করে। সেই নিউজটা আসেই না বা পত্রিকায়ও আপনারা সেটা বড় করে দেখান না। গুমটা যত বড় করে দেখান, গুমটা যখন উদ্ধার হয়, ওটা যদি সমানভাবে দেখাতেন তাহলে তো বাংলাদেশের এই বদনামটা হতো না।’

অপপ্রচারের অভিযোগ

দেশের কিছু মানুষের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগও আনেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারা যেসব স্টেটে থাকে সেখানকার স্থানীয় সিনেটর, কংগ্রেসম্যান, তাদের কাছে নানা রকম বানোয়াট মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। দিয়ে দিয়ে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে।

‘আর সেই সঙ্গে দেশের বদনাম করে। যারা করে তারা নিজেরা একেকটা অপকর্ম করে কিন্তু দেশ ছাড়া। কোনো না কোনো অপরাধে তারা অপরাধী অথবা চাকরিচ্যুত।’

মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান ও তাদের প্রজন্মরাও এসব অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।

যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই

জাতিসংঘেও যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরার বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন তিনি। বলেন, ‘আমি কিন্তু আমার বক্তৃতায় এ কথা স্পষ্টভাবে বলে আসছি, এটাও বলেছি এ যুদ্ধ থামাতে হবে। শুধু অস্ত্র প্রতিযোগিতা আর যুদ্ধ করে শুধু অস্ত্র প্রস্তুতকারী বা বিক্রিকারী দেশ লাভবান হবে আর আমাদের মতো সাধারণ দেশের মানুষ না খেয়ে মরবে, কষ্ট পাবে, আমাদের দেশ কেন, ইউরোপের মানুষ তো কষ্টে আছে।’

দেশে দেশে যুদ্ধের প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ শতাংশ বাড়িয়েছে। আমি যদি ৪০ পার্সেন্ট বৃদ্ধি করি আপনারা কেমনভাবে চিল্লাবেন? একটা উন্নত দেশ, তাদের সবকিছুই বিদ্যুতে, বাড়ির দরজাও খুলে বিদ্যুতে, চুলাও জ্বলে বিদ্যুতে সবই, আমাদের তো এখনও তা না। আমেরিকারও একই অবস্থা। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে।’

ইউরোপ কয়লা নিয়ে এত কথা বলেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফিরে গেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমাদের ওপরেই প্রচণ্ড চাপ। অনেক কথা শুনতে হয়েছে। আমি তো কোনো চাপের কাছে মাথানত করিনি। যেটা আমার প্রয়োজন সেটা আমি করব। হ্যাঁ তাতে আমার দেশের এনভায়রনমেন্ট নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে আমি সচেতন। সেটা যে হচ্ছে না, তার প্রমাণও আমি দিয়েছি। আন্তর্জাতিক বহু ফোরামে এটা নিয়ে তর্ক হয়েছে। এখন পেলে জিজ্ঞেস করতাম, এখন আপনারা কী বলবেন, সেই আদিযুগেই তো ফিরতে হলো?’

এ বিভাগের আরো খবর