নাটোরের যে রেলগেটে ট্রেন আসার সময় একটি কুকুরের ১০ মিনিট ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকার ঘটনা ঘটেছে, সেই রেলগেট ধরে চলা মানুষগুলো বড়ই অস্থির। ধৈর্য দেখে প্রাণীটিকে ব্যাপক প্রশংসায় ভাসানো স্থানীয়রাও ধৈর্য দেখাতে পারছেন না।
মঙ্গলবার সেই কুকুরটির এই কাণ্ডের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। তার পরদিন বুধবার বিকেলে সেই রেলগেটে গিয়ে দেখা যায়, মানুষজন বার ফেলা অবস্থায় হেঁটে, দৌড়ে পার হচ্ছে এমনকি বার উঁচু করে বাহন নিয়ে যাচ্ছে, দুই চাকার বাহনগুলো নানা কায়দা কসরত করে পার করছে।
বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত পরপর কয়েকটি ট্রেন এই রেলগেট পার হয়ে যায়। প্রতিবার ট্রেন আসার আগে সড়কের দুই পাশের বার ফেলে দেয়ার পাশাপাশি বাজতে থাকে সাইরেন। এই সময়ে মানুষজন বারের নিচ বা পাশ দিয়ে বাধা অতিক্রম করে ভোঁ দৌড় দিয়ে রেললাইন পার হতে দেখা যায়। যারা সাইকেল বা মোটরসাইকেলে তারা আবার ‘জরুরি কাজ’, ‘দেখেই পার হয়েছি’, ‘অনেকক্ষণ বার ফেলে রাখা’ জাতীয় নানা যুক্তি দেন।
এক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে গেট নামিয়ে দেয়ার পরও তিনি পার হয়ে এসেছেন। দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে তার এটা হয়েছে। তবে তিনি অন্তত তার ভুলটা স্বীকার করেছেন, যা অন্যরা স্বীকারও করেননি।
আরেক সাইকেল আরোহী বলেনন, দ্রুত বাড়ি যেতে হবে। অপেক্ষার সময় নেই তাই গেট নামিয়ে দেয়ার পরও নিচ দিয়ে পার হন।
বেশ কয়েকজন অবশ্য কোনো কথা না বলে হাসি দিয়ে চলে যান।
‘শিখল না কেউ’
নাটোর চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জানান, ‘চামড়াপট্টি এলাকায় খাবারের সন্ধানে কুকুরের আনাগোনা থাকে। গেল সোমবার বিকেলে এমনই একটি ছন্নছাড়া কুকুর রেলগেটে অপেক্ষা করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা সত্যিই অনুকরণীয়। আমাদের সবার তার কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। কিন্তু মানুষের যে তাড়াহুড়া দেখি, তাতে মনে হয় না তাদের কেউ শেখার কিছু আছে।’
মাসুম ইসলাম নামে আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘কুকুরটাকে কেউ শিখিয়ে দেয়নি যে ট্রেন আসলে অপেক্ষা করতে হয়। সে নিজ থেকেই শিখে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটা দেখে খুবই ভালো লেগেছে। পুরো দেশবাসী কুকুরের নিয়ম মানার দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছে। কিন্তু যারা প্রাণীটিকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, তারা কি এ থেকে কোনো কিছু শিখবেন? শিখলে এত বিশৃঙ্খলা কেন?’
কুকুরটি কোথায়
স্থানীয়রা জানান, যে কুকুরটি ধৈর্য দেখিয়ে উদাহরণ তৈরি করেছে, সেটি এলাকায় ঘোড়াঘুড়ি করে না। পথকুকুর হিসেবে হয়ত দূরের কোনো জায়গা থেকে এখানে ঘুরতে চলে এসেছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা আকরামুল হাছান আক্কু বলেন, ‘এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানো কুকুরটিকে কেউ এই ধৈর্য শিখিয়ে দেয়নি নিশ্চিত। সে নিজেই নিয়ম মেনে চলা শিখেছে। এটা থেকে সবারই শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত।’
রেলগেটে অপেক্ষমাণ কুকুটির ছবি তুলেছিলেন নাটোর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু।
গত সোমবারের ঘটনাটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী থেকে ছেড়ে এসে নাটোর রেলওয়ে স্টেশনে এসে থামে উত্তরা নামে একটি ট্রেন। আগে থেকেই এ স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকাগামী আরেকটি ট্রেন তখন ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। স্টেশনের কাছাকাছি এলাকায় থাকা একটি রেলগেটে তাই সিগন্যাল ফেলে রাখা হয় প্রায় ১০ মিনিট।
‘ঝুঁকি থাকলেও তার অপেক্ষা না করেই সিগন্যাল অমান্য করছিলেন অসহিষ্ণু অনেকেই। তবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল কুকুরটি। ট্রেনটি রেলগেট অতিক্রম করে যাওয়ার পর গেটম্যান বার তুলে দিলে কুকুরটিও বাম দিক দিয়ে রেললাইন পার হয়ে চলে যায়।’
সোমবার বিকেল ৩টা ৪৭ মিনিটে সিগন্যালে অপেক্ষমাণ ওই কুকুরটির পরপর কয়েকটি ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন নুরু। এরপর ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়।