বিদেশে চিকিৎসাধীন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ হঠাৎ করে ২৬ নভেম্বর দলের সম্মেলন ডাকার কারণ জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনের একটি হোটেলে জাতীয় পার্টির রওশনপন্থিদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও বার্তায় তিনি সম্মেলন (কাউন্সিল) ডাকার কারণ ব্যাখ্যা করেন।
যদিও রওশন এরশাদের কাউন্সিল ডাকাকে সম্পূর্ণ অবৈধ, অনৈতিক ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি বলেছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
ভিডিও বার্তায় রওশন এরশাদ বলেন, ‘আমার স্বাস্থ্য আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছে, আমি এখন অনেকটা সুস্থ। পায়ের গিরায় সমস্যা আছে, এখান থেকে সেটার জন্য আমি ফিজিওথেরাপি নিচ্ছি। আর সব কিছু ভালো আছে, আমার ক্যানসার তো নাই ইনশাআল্লাহ।’
কাউন্সিল ডাকার কারণ উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, ‘কাউন্সিলটা ডেকেছি তার কারণ অনেক আছে, বিশেষ করে কিছু কিছু লোকের সঙ্গে...। গত কাউন্সিলে আমাদের গঠনতন্ত্রকে পরিবর্তন করে দিয়েছে, যেখানে যেখানে যার যত ক্ষমতা ছিল তা খর্ব করে দেয়া হয়েছে। এবং অনেক জায়গায় সংশোধন করে নতুন করে গঠনতন্ত্র আনা হয়েছে, এটা ঠিক হয় নাই।’
তিনি বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের মৃত্যুর পর পার্টিটা অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, এখন আমার মনে হয় পার্টিটা ঠিকমতো পরিচালিত হচ্ছে না। সে জন্য পার্টিটাকে শক্তভাবে দাঁড় করাতে হবে। আমার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে, তাদের সঙ্গে আমি কথা বলছি। যাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছি তাদের সঙ্গে আমি টেলিফোনে সব সময় যোগাযোগ করি। এবং চিঠিপত্রের মারফতে যোগাযোগ করি।’
তিনি বলেন, পার্টিকে শক্তিশালী করতে হবে, পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যাতে করে আমরা আগামী নির্বাচন ভালোভাবে করতে পারি। আমাদের দলের বেশির ভাগ লোকেরই বয়স হয়েছে, নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই আনতে হবে, যারা সরকারি কর্মকর্তা আছেন, রিটায়ের্ড করেছেন তাদেরও আনতে হবে। বেসামরিক কর্মকর্তা আছেন তাদের আনতে হবে, তাদের আনার জন্য সাদর আমন্ত্রণ জানাতে হবে। আহ্বান জানাতে হবে। আগামী ইলেকশনে (কাউন্সিল) আমি অবশ্যই নেতা-কর্মীদের ম্যানডেট নিচ্ছি। জাতীয় পার্টির পতাকাতলে আসার জন্য যারা ব্যস্ত, যারা পার্টি থেকে বহিষ্কার হয়ে গেছেন, যারা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন, তারা সক্রিয় হচ্ছেন। এখন আবার জাতীয় পার্টি করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।’
ইভিএমে নির্বাচন হলেও ভোট করব
ইভিএম নিয়ে জাতীয় পার্টির বর্তমান নেতৃত্ব যখন ব্যাপক সমালোচনায় মুখর তখন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ওই ভিডিও বার্তায় জানালেন তিনি ইভিএমে নির্বাচন হলেও ভোট করবেন।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই করব, ইভিএম হলেও নির্বাচন করব, সারা বিশ্বে এখন ইভিএমে নির্বাচন হচ্ছে। কাজেই আমাদের দেশে এটা হবে তা তো নতুন কথা নয়। যখন আমরা ফাইভজি ব্যবহার করছি, সেখানে ইভিএম ব্যবহার করতে সমস্যা কী।’
‘এখানে যারা নির্বাচনে জয় পায় তারা বলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে আর যারা হেরে যায় তারা বলে কারচুপি হয়েছে। সুতরাং আমরা ইভিএমে নির্বাচন করব। আগামী মাসে (অক্টোবর) আমি দেশে ফিরে আসব ইনশাআল্লাহ।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের বলব, ‘আপনারা দুর্দিনে আমাদের পাশে ছিলেন এখনও আছেন, তারা পার্টিকে শক্তিশালী করবে, সেই বিশ্বাস আমার আছে, তারা নিশ্চয়ই কাজ করবে।’
তিনি বলেন, আমি রংপুরবাসীর জন্য বলছি, তারা দুর্দিনে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে। এরশাদকে সহযোগিতা করেছে।
একদিকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদপত্নী বেগম রওশন এরশাদ, অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতার ভাই জি এম কাদের। দুজনের বিপরীতমুখী অবস্থানে ভাঙনের কবলে দল। ওদিকে জাতীয় নির্বাচনের দামামা বাজার অপেক্ষা। এই সময়ে এই দ্বন্দ্ব দলটিকে নতুন কোনো সংকটে ফেলে কি না, তা নিয়ে আছে আলোচনা।
সমস্যার শুরু গত ৩১ আগস্ট। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ হঠাৎ করেই আগামী ২৬ নভেম্বর দলের সম্মেলন ডেকে বসেন। সেটি আবার জানতেন না দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। সেদিনই বিষয়টি স্পষ্ট করেন তার অনুসারী নেতারা।
পরদিন জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল বৈঠক করে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীকে চিঠি দেন। ১৪ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এরশাদ অনুসারী হিসেবে পরিচিত হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, দলের মধ্যে যে সংকট, তা আসলে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে। অতীতেও নির্বাচন এলেই দলটিতে এমন সংকট দেখা গেছে। আগামী দিনে কারা ক্ষমতায় থাকবে, সেদিকেই দৃষ্টি এখন দলের। এ কারণেই বেশ কিছু কৌশল নিয়েছেন দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা।