নওগাঁয় শহরের প্রাণকেন্দ্র গোস্তহাটির মোড়ে পৌরসভার সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে লিটন ঘোষ নামের এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। তবে পৌর মেয়র নজমুল হক সনি বলেছেন, কে বা কারা কোন সম্পত্তি দখল করছে, এটা দেখার মতো বাড়তি সময় আমার হাতে নেই। পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে সারা দিন ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হয়ে।
গত এক মাস যাবৎ প্রকাশ্যে সেখানে পাকা স্থাপনা নির্মাণকাজ চললেও না দেখার ভান করে চলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। মোটা অঙ্কের টাকায় মেয়র ও কাউন্সিলরকে ‘ম্যানেজ’ করেই সম্পত্তি দখল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এমন অবস্থায় স্থানীয়দের দাবি, স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে পৌরসভার সম্পত্তি দখলমুক্ত করা হোক।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের গোস্তহাটির মোড়ের বর্তমান শৈলগাছী ইজিবাইক স্টান্ডে নব্বই দশকে পৌরসভার ডিমের বাজার ও তরকারি বাজার ছিল। ২০০২ সালের দিকে বাজারটি স্থানান্তর হলে সেখানে টিনের দোকানপাট তৈরি করে দখলে নেয় প্রভাবশালী লিটন ঘোষ। দোকানগুলো থেকে নিয়মিত ভাড়াও তিনিই আদায় করতেন।
বর্তমানে টিনের দোকানগুলো ভেঙে জমিটি স্থায়ীভাবে দখলে নিতে ইটের গাঁথুনি দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। শহরের ভেতরে প্রকাশ্য অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও বিষয়টি জেনেও নীরবে রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
নির্মাণকাজ বন্ধে সম্প্রতি ‘সচেতন এলাকাবাসীর’ ব্যানারে গণজমায়েত ও মানববন্ধন করলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি।
স্থানীয় বাসিন্দা লতিফ হোসেন বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে এই জমিসহ আশপাশের সব জমিতে পতিতালয় ছিল। পরে তাদের উচ্ছেদ করা হলে জমিগুলো সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। তার মধ্যে এই জমিটি বর্তমানে নওগাঁ পৌরসভার খাস সম্পত্তির মধ্যে পড়েছে। যার মূল্য কমপক্ষে ২ কোটি টাকা। অথচ এত মূল্যবান সম্পদ রক্ষায় পৌর কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে সরকারের সব সম্পত্তিই ব্যক্তিমালিকানাধীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
জমি দখলে অভিযুক্ত লিটন ঘোষ নিজের জায়গা দাবি করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকেই জমিটির ভোগদখল আমরা করে আসছি। কিছু দোকানপাট করে নিয়মিত সেখান থেকে ভাড়া উত্তোলন করি। পৌরসভাকে ম্যানেজ করেই এখন স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। এখানে কতটুকু জমি ব্যক্তিমালিকানা এবং কতটুকু খাস সেটা পৌরসভা বুঝবে। তারা এসে দেখেও গেছে।’
স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক মজনু বলেন, ‘ওই স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি মেয়র অবগত আছেন। তিনি ঘটনাস্থলে যেতে চেয়েও এখনো যাচ্ছেন না। একজন কাউন্সিলরের একার পক্ষে এই নির্মাণকাজ বন্ধ করা সম্ভব নয়। মেয়রের নির্দেশনা পেলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।’
নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনি বলেন, ‘কে বা কারা কোন সম্পত্তি দখল করছে, এটা দেখবার মতো বাড়তি সময় আমার হাতে নেই। পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে সারা দিন ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হয়ে। এসব দেখভালের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের দেয়া হয়েছে। জমিটি আদৌ পৌরসভার কি না সেটিও আমার জানা নেই।’
অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকাজ বন্ধে এলাকাবাসী মানববন্ধন করলেও এখনো কেন বন্ধ করা হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি জানার পর ভূমি অফিস থেকে নায়েবকে পাঠিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র নিয়ে লিটন ঘোষকে ভূমি অফিসে আসতে বলা হয়েছে। এরপরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্মাণকাজ চলমান রাখলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’