কথা দিয়ে তা রাখতে না পারা ছাত্রলীগ চাননি বলে আক্ষেপ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন ও সংসদ সদস্য (এমপি) ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে এমন আক্ষেপ করেন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের এমপি।
বুধবার রাত ১টা ১৪ মিনিটে দেয়া স্ট্যাটাসে কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর থেকে নির্বাচিত আইনপ্রণেতা লেখেন, ‘এই লেখাটি বারবার তাদের কাছে পাঠিয়েছি। আমরা কি এই ছাত্রলীগ চেয়েছিলাম? যারা কথা দিয়ে কথা রাখতে পারে না। কিসের লোভে? এখন জানার সময় হয়েছে।’
স্ট্যাটাসে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে উদ্দেশ করে লিপি লেখেন, ‘স্নেহের ভাই জয় ও লেখক, শুভেচ্ছা নিও। শ্রদ্ধেয় বড় আপা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শ্রদ্ধেয় ছোট আপা শেখ রেহানা আপার আন্তরিকতায় আমি কিশোরগঞ্জ-১ (সদর ও হোসেনপুর) সংসদীয় আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছি। আমার নির্বাচনী এলাকাধীন—কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি আমার কনসার্ন নিয়ে যেন হয়, সে বিষয়ে সতর্ক খেয়াল রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিও।
‘উল্লেখ্য তোমরা দুজনে আমাকে কথা দিয়েছিলে সদর ও হোসেনপুরের কমিটি আমার মতো করে দেবে। এ ছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকও আমাকে অনুরূপ কথাই দিয়েছিল।’
তিনি আরও লেখেন, ‘জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা ও প্রয়াত জননেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট বোন হিসেবে আশা করি এ ব্যাপারে তোমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।’
উল্লিখিত স্ট্যাটাসের পর কাছাকাছি সময়ে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন লিপি। এতে তাকে না জানিয়ে হোসেনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে জায়গা পাওয়াদের নাম ফেসবুকে প্রকাশ হয়েছে বলে জানান এমপি।
তিনি লেখেন, ‘শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ পুত্র, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী, প্রয়াত জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একাধিক মেয়াদে নির্বাচনী এলাকা তথা বর্তমানে আমার নির্বাচনী এলাকাধীন হোসেনপুর উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের কমিটি কিছুক্ষণ আগে ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে, যা সম্পর্কে আমি অবহিত নই। অছাত্র, বিবাহিত, বয়স উত্তীর্ণ ও বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে বারবার বলার পরও কেন বা কী কারণে সমন্বয় না করেই মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটি কর্তৃক এমন একটি বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা করা হলো? আমরা কি এমন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চেয়েছিলাম?’
ছাত্রলীগ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের এমপি লেখেন, ‘বি.দ্র. মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিতর্কিত কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ও নবগঠিত হোসেনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের বিতর্কিত কমিটির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
স্ট্যাটাসের বিষয়ে কী বলছেন লিপি
মতামত না নিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের বিষয়ে স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে নিউজবাংলার প্রশ্নের জবাবে জাকিয়া নূর লিপি বলেন, ‘আমি যেটা বলতে চাই যে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি এবং সেক্রেটারি আছে, জয়-লেখক, তাদের গত দুই বছরে…কত যে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠাইছি এবং ফোনে কথা বলছি। এমনকি জয়কে আমার বাসায়ও ডেকে আনছি।
‘শুধু একটা কথা বলছি; ভাই আমাকে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা রেখে এখানে নিয়ে আসছেন আমার ভাইয়ের জায়গায়; ভাইয়ের কাজ সমাপ্ত করার জন্য। সবারই আমার সহযোগিতা দরকার, কিন্তু আমার একটাই অনুরোধ থাকবে...আমার যে সংসদীয় আসনের দুইটা উপজেলা: কিশোরগঞ্জ সদর এবং হোসেনপুরে, এখানে ছাত্রলীগের কমিটিগুলো যখন হবে, অন্তত আমার কনসার্নটা যেন একটু নেয়।’
এ কমিটির ক্ষেত্রে মতামত নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন এমপি লিপি। ছবি: সংগৃহীত
জেলা ছাত্রলীগের কমিটির ক্ষেত্রে কোনো মতামত নেয়া হয়নি দাবি করে এই এমপি বলেন, ‘কোনো রকম কনসার্ন তারা নেয় নাই এবং জেলা ছাত্রলীগ যারা আছে, তারা মেয়াদোত্তীর্ণ। তারা এক বছরের জন্য আসছিল। অলরেডি দুই বছর হয়ে গেছে।
‘মানে কোনো রকম আমার কাছে কনসার্ন নেয় নাই এবং কমিটিতে যাদের নেয়া হয়েছে, সভাপতির বয়স ত্রিশের ওপরে ৩৩ এবং জানা মতে অনেকে বিবাহিত এবং কারও কারও ওয়াইফের বাচ্চাও হবে।’